রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৩

কবুতরের ডেপথিরিয়া (Diphtheria)

কবুতরের ডেপথিরিয়া একটি মারাত্মক প্রকৃতির রোগ। আক্রান্ত পাখিদের দেহ হতে সুস্থপাখিদের মধ্যে আক্রমন করে ও একটার পর একটা সংক্রমিত হতে থাকে। এই রোগের মুখ্য কারন হিসাবে Micrococci নামক ব্যাকটেরিয়া ঘটিত জীবাণুকে দায়ী করা হয়। ইহারা ডাল পালার মত দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং শেষ পর্যায়ে হৃত্পিণ্ড ,যকৃত ,ফুসফুস ইত্যাদি আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এটি ধুলো, পানি ও বায়ুর মাধমেও ছড়াতে পারে। এই রোগে মৃত্যুর হার খুব বেশি। অনেক সময় আরোগ্য লাভের পরও হৃত্পিণ্ড এর অস্বাভাবিক দুর্বলতা হেতু ও পর্যাপ্ত যত্নের অভাবে মারা যায়। এইজন্য রোগ মুক্তির পরও একটু খেয়াল রাখতে হয়। এই রোগে খুব দ্রুত চিকিৎসা না দিলে মারা যায়। এই রোগে মৃত্যুর হার ৯০ ভাগ।


কারনঃ


সাধারণত নোংরা খাবার ও পানির পাত্র, বেড়াল ও ইঁদুর বা তেলেপোকার খাবারে মুখ দিলে বা কামড়ান বা এর লোম পেটে গেলে ইত্যাদি এই রোগ হতে পারে। ধুলো, পানি ও বায়ুর মাধমেও ছড়াতে পারে।


Diphtheria 1


লক্ষণঃ


# এই রোগের প্রথম লক্ষণ হিসাবে দেহে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা যায়।

# বিষ্ঠা হালকা সবুজ,বা সাদা বা সাধারন রং এর হতে পারে।

# নাক ও মুখ দিয়ে পানি পড়া ।

# শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

# পাখি খুব দুর্বল হয়ে পড়ে।

# আংশিক পা বা পাখা পক্ষাঘাত

# ধীরে ধীরে কাশি শুরু হয়(যদিও অনেকে এটা ঠাণ্ডা বলে ভুল করে থাকে।)

# মুখে ও জিব্বায় সাদা জিল্লির মত দেখা যায়, মাঝে মাঝে লম্বা সুতার মত মুখের ভিতর দেখা যায়, তাই অনেকে কৃমি বলে মনে করে থাকে। (অনেকে এটা কাংকার বলেও ভুল করে থাকে।)

# মুখে দুর্গন্ধ থাকে এবং পরে পানি ও অভুক্ত খাবার সহ দুর্গন্ধ যুক্ত বমি নাক মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে।

# পেশী দুর্বলতা ও চোখ সংক্রমণ হয়।

# অনেক সময় গলা ফুলে টনসিল এর মত হয় কিন্তু তন্সিলের মত গতা বিচি মত হয় না।(অনেকে এটা টনসিল বলে ভুল করে থাকে।)

# খাবার গিলতে খুব কষ্ট হয় তাই খাবার মুখে নিয়ে ফেলে দেয়।

# পাখি লোম ফুলিয়ে এক জাগায় বসে থাকে।

# অনেক সময় কাশির সাথে রক্তু পড়তে পারে।

# শেষ পর্যায়ে ঘাড় শক্ত হয়ে যায় ও প্রচণ্ড কাশি ও সর্দির লক্ষণ দেখা যায়।

# মুখের সাদা পর্দা দেখা যায় এবং এটা তুললে কাচা ঘা দেখা যায়।

# এই রোগের পরবত্তি পর্যায়ে কাশির প্রভাব বেড়ে যায় তাই অনেকে দেখে ঘুংরি কাশি বলেও ভুল করে থাকে ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করে থাকে যা পাখির জন্য প্রানহানিকর হয়।


প্রতিরোধঃ


# নিয়মিত খাবার ও পানির পাত্র ডেটল পানি দিয়ে ধুতে হবে।

# খামার পুরিস্কার রাখতে হবে।

# পোকামাকড়,ইঁদুর ও বিড়াল কে আটকাতে হবে যাতে খামারে প্রবেশ না করে।

# বাইরের স্যান্ডেল পরিহার করতে হবে।

# নিয়মিত জীবাণু মুক্ত স্প্রে বা চুন অথবা বরিক পাওডার ছিটাতে হবে।

# টিনের খাবার পাত্র জং ধরে গেলে বাদ দিতে হবে।


চিকিৎসাঃ


# ডিপথিরিনাম ২০০ হোমিও দিনে ২/৩ বার ব্যাবহার করতে হবে অল্প একটু গরম পানির সাথে।

# ঠাণ্ডা পানি দেওয়া যাবে না।

# Orasin K ১ সিসি করে দিনে ৩ বার দিতে হবে ১ গ্রাম স্যালাইন পানির সাথে।

# নিয়মিত বারলি,সাগু বা আটা গুলিয়ে ৫ সিসি করে দিনে ৩ বার দিতে হবে।(তবে ঔষধ দিবে পরে এবং হালকা গরম পানির সাথে।

# রোগ ভাল হবার পরও নিয়মিত স্যালাইনে, ভিটামিন দিতে হবে।


পরিশেষে বলা যায় যে এই রোগ গ্রীষ্ম ও বর্ষা বেশি দেখা, তবে যদি নিয়মিত প্রতিরোধ ব্যাবস্থা গরে তোলা যায় তাহলেই ভাল, কারন রোগ নির্ণয় ও পরবর্তী চিকিৎসা ও যত্ন অনেকেই হয়তো ঠিকমত নাও করতে পারেন। ফলস্বরূপ আপনার কবুতরের অনাখাঙ্কিত মৃত্যু।


মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই



কবুতরের ডেপথিরিয়া (Diphtheria) BD Online Pigeon Market

কবুতরের ডেপথিরিয়া (Diphtheria)

Pigeon Diseases & treatment

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন