রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৪

আপনার কবুতর কে ঠিকমত লক্ষ্য করুন (কেস স্টাডি)

আপনার কবুতর কে ঠিকমত লক্ষ্য করুন (কেস স্টাডি)


দুই বন্ধুর অনেকদিন পর দেখা হল, এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে জিজ্ঞাস করল, কি দোস্ত কেমন আছো ? এক বন্ধু বলল আমি ভাল আছি!…অন্য বন্ধুটি বলল সাধু সাধু…কিন্তু অন্য বন্ধুটি কথার রেশ ধরেই বলল…আমি ত ভাল আছি কিন্তু বাসার কুকুরটা মারা গেছে!…অন্য বন্ধু বলল কেন…? প্রথম বন্ধুটি বলল…এই একটু পাগল হয়ে গেছিল আর কি!… অন্য বন্ধু বলল কেন…? প্রথম বন্ধুটি বলল…আই মরা খেত…অন্য বন্ধু বলল মরা খেত মানে…কেন…? প্রথম বন্ধুটি বলল…এই এলাকায় একটু বন্যা এসেছিল ত…তাই …। অন্য বন্ধু বলল মানে…? প্রথম বন্ধুটি বলল…মানে হল…বন্যার কারনে…ঘর বাড়ি সব ভেঙ্গে গেল…অন্য বন্ধু আরও অবাক হল…বলল কেন…? আর এর সঙ্গে মরা খাবার কি সম্পর্ক? প্রথম বন্ধুটি বলল…এই …গরু…ছাগল…হাস…মুরগি…যা ছিল …সব মারা গেল…কোন খাবার ছিলনা ত…দেশে আকাল লেগে গেল…আর কি…প্রথম বন্ধুটি আরও বলল…আর বন্ধু তুমিতো জান আকাল লাগলে খাবার দাবার ত পাওয়া যাই না…তাই…আর কি…। প্রথম বন্ধুটির বলার…কিছুই রইল না……!



এই গল্প আমি অনেকজনের কাছেই করেছি। অনেকবারই কিন্তু আজ আবার এটা বলার ইচ্ছে কে দমন করতে পারলাম না। কারন এই গল্পের সাথে আমার বাস্তব জীবনের অনেক মিল পাই! প্রায়ই মানুষ কবুতর এর সমস্যা নিয়ে বলতে প্রথমে কবুতর নিয়ে যে জিনিষ টি বলে তা হল আমার কবুতর ঝিমাচ্ছে! অথবা লোম ফুলিয়ে বসে আসে ! কেন? জানিনা পায়খানার রঙ কেমন? হা ভাল! একটু ভাল করে দেখেন হা হালকা সাদা সাদা নাকি সাদা সবুজ? হা সাদা সবুজ! খাবার খায় ?না! কয়দিন ধরে? এই ২-৩ দিন! কোন ঔষধ দিছেন। এই রকম ভাবে আস্তে আস্তে আসল ঘটনা বের হয়ে আসে বা বলতে পারেন বের করতে হয় বা কিছু লোক আছে যারা তাও ঠিকমত দেখার সময় পান না বলেন জি ভাই চেক করে জানাব আর এরই ব্যাবধানে অনেক সময় অনেক দেরি হয়ে যায়! কিন্তু তাতে কি আসে যাই আরে ভাই সখের দাম লাখ টাকা সখের জন্য মানুষ কত দেশে চলে যায় কত টাকা খরচ করে আর আমি !!! এভাবেই দিন যায় সময় পার হয়ে যায় মাস যায় বছর ঘুরে আসে কিন্তু আমারা যেখানে সেখনেই রয়ে যায়। যে সেক্টর আজ বাংলাদেশে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় থাকতে পারত, তা আজ স্বপ্ন মাত্র কিন্তু কেন? কোন কারন নাই যাদের আজ হাল ধরার কথা ছিল, আজ তারা স্বার্থের চাদর মুড়ি দিয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন অথবা স্বার্থের পেটি মাথাই নিয়ে বসে আছেন, কেউ বা ঘুরে বেড়াচ্ছেন উনাদের কাছে দিন রাত সমান যতক্ষণ না তাদের নিজের কোন স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে বা নিজেদের ঘরে আগুন লাগছে ততক্ষণ এদের ঘুম ভাংবে না কারন যারা জেগে ঘুমাই তাদের জাগান মুশকিল। আমাদের কবুতর খামারিদের মধ্যে কিছু বুজরুকি তৈরি হয় মাঝে মাঝেই আর সেই বুজরুকির তপে পরে অনেক খামারি তাদের মূল্যবান কবুতর হারান যা হয়ত তার প্রিয় ছিল বা অনেক দিনের যা হয়ত সে অনেক কষ্টে, অনেক অনেক পরিশ্রম করে বড় করেছিলেন। কিন্তু সেই সব বুজরুকি দের কিছু আসে যায় না কারন তাদের ত আর কোন ক্ষতি হচ্ছে না আর বলতে ত তাদের টাকা পয়সা লাগে না কিন্তু তারা জানেই না তারা একটি জীব হত্যার মত পাপে জড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিভাবে? আজ এক একজন না জেনে না শুনে নানা ধরনের মেডিসিনর উপদেশ দিচ্ছেন আর সেটা অনুসরন করে আজ অনেক খামারি সর্বস্বান্ত। এরা আসলে চক্রান্ত করে এই সেক্টরটাকে নষ্ট করার জন্য, কিন্তু তারা তা কখনও পারবে না। আল্লাহ্‌ বলেন, “আর এমনিভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে অপরাধীদের জন্য কিছু সর্দার নিয়োগ করেছি-যেন তারা সেখানে চক্রান্ত করে। তাদের সে চক্রান্ত তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই; কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারে না।” (সূরা আন-আম, আয়াতঃ১২৩) আল্লাহ্‌ আরও বলেন, “যারা অপরাধ করছে, তারা অতিসত্বর আল্লাহর কাছে পৌছে লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তি পাবে, তাদের চক্রান্তের কারণে।” (সূরা আন-আম, আয়াতঃ১২৩)


আমাদের দেশে সবারই নতুন কিছুর প্রতি একটু বেশি মোহ যেমন নতুন মতবাদ। সেটা পীর সাহেবেরই হোক বা অন্য কার হোক কারন এটা না করলে মুরিদ পাওয়া যাবেনা। জনপ্রিয় হওয়া যাবে না। আর এটা যে শুধু সেই সব বুজরুকি লোকদেরই দোষ তা আমি বলব না। কারন আমারা সবাই স্নেহা’ন্ধ হয়ে গেছি, একটুতেই বেশি অস্থির হয়ে যাই নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখতে পারিনা। এক বিখ্যাত লেখকের বইয়ে পড়েছিলাম যে,”দয়া মায়া থাকতে আছে তা যেন তোমাকে আন্ধা না করে।” কিন্তু আমারা এটা বুঝেও অবুঝ হয়ে যাই। আমি একজন অতি সাধারন মানুষ নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন জনের কবুতরের খামারের সমস্যার সমাধান কল্পে উপদেশ দিবার চেষ্টা করি। যেহেতু খুবই তাড়াতাড়ি ও সহজে সমাধান দেই তাই হয়ত অনেকেরই পছন্দ হয় না। হয়ত ভাবেন হাওয়ার উপর গুলি মাড়ছেন। যেটা আগেই বলেছি যে ভাব ও ভান ধরাটাই আজকাল বুজরুকি, একটু কঠিন ঔষধ বা একটা ভাব ধরে বলা বা একটু আনকমন ঔষধ বলতাম, তাহলেই হয়ত সবাই ঠিক মত পালন করতেন। আমি নাম কামান বা লোক দেখানর জন্য কোন কাজ করি না। আমার মনের অবস্তা আল্লাহ্‌ ভাল জানেন, আমি যেটা করি সেটা নেকের আশাই করি আল্লাহ্‌ করুনা লাভের আশাই করি। কোরআনে আল্লাহ্‌ বলেন, “যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ পাবে এবং যে, একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।” (সূরা আন-আম, আয়াতঃ১৬০)


আমাদের এখানে একজন ডাক্তার (আমার উকিল বাবা।) তিনি কোন প্রকার প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা ছাড়াই ঔষধ দেন তাই তার কাছে রুগী কম যায় কারন তিনি ভাল ডাক্তার না কোন টেস্ট দেন না তাই। যদি টেস্ট দিতেন তাহলেই হয়ত ভাল ডাক্তার হতে পারতেন। না ভাই আপনারা আবার আমাকে ভুল বুঝেন না। আমি নিজেকে ডাক্তার বলছি না বা সেই পদের দাবিদারও না, সেটা করাও আমার সাজে না। আমি সুধুই উদাহারন এর জন্যই বললাম। আমি একজন অ্যাডভাইজার আর এর মধ্যেই সিমাবদ্ধ থাকতে চাই। এর বেশি কিছু না। কিছু মানুষ আছেন যারা শুধু পরীক্ষা করার জন্য প্রস্ন করে থাকেন। যেমন কিছুদিন আগে একজন প্রস্ন করলেন, আমি উপদেশ দিলাম, তিনি জানালেন তিনি এটা করেছেন, আমি অন্য আরেকটা উপদেশ দিলাম, তিনি বললেন এটাও তিনি পালন করেছেন এভাবে আমার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের যতটুকু ছিল সব বললাম, কিন্তু দেখলাম, তিনি বলছেন সবই পালন করেছেন, তখন আমি তার কাছে মাফ চেয়ে বললাম ভাই তাহলে এ ব্যাপারে আমি এর কিছুই জানি না আমার পক্ষে এর কোন উপদেশ দেয়া সম্ভব না মনে হল এবার তিনি মনে একটু সান্তনা পেলেন হয়ত একটু মুচকি হাসলেনও কিন্তু কি আসে যাই তাতে!! আল্লাহ্‌ বলেন, “তবে কোন সম্প্রদায়ের ধোঁকা দেয়ার ব্যাপারে যদি তোমাদের ভয় থাকে, তবে তাদের চুক্তি তাদের দিকেই ছুঁড়ে ফেলে দাও এমনভাবে যেন হয়ে যাও তোমরাও তারা সমান। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধোকাবাজ, প্রতারককে পছন্দ করেন না।” (সূরা আল আনফাল, আয়াতঃ৫৮)


“আর যদি তারা তোমার সাথে প্রতারণা করতে চায়-বস্তুতঃ তারা আল্লাহর সাথেও ইতিপূর্বে প্রতারণা করেছে, অতঃপর তিনি তাদেরকে ধরিয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত, সুকৌশলী।না।” (সূরা আল আনফাল, আয়াতঃ৫৮)


কবুতর পালা আমার পেশা না বা উপদেশ দিবার জন্য আমি কোন প্রারিস্রমিক ও গ্রহন করি না, কিন্তু তার পরও মানুষ মনে করেন আমি এটা করতে বাধ্য, আমি বাধ্য নই এর পৃথিবীর কোন শক্তিই আমাকে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাধ্য করতে পারবে না। আমি ব্যাবসায়িক কাজে নানা সময়ই নানা কাজে ব্যাস্ত থাকতে হয়, হয়ত এই কারনেই অনেক সময় ফোন ধরতে পারি না, কিন্তু যখনেই আমি মিস কল দেখি তখনি তা ব্যাক করার চেষ্টা করি। কিন্তু তারপর কিছু মানুষ এটা বুঝেন না আর তাই আমাকে অনেক সময় বাধ্য হয়ে ফোনে টা অফ করে দিতে হয়। এইত সেদিন একভাই আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বললেন কি ব্যাপার আপনাকে ফোনে পাওয়া যাই না কতক্ষণ ধরে আপনাকে চেষ্টা করছি, বলেই আমার কথা বলার সুযোগ না দিয়ে, বলা শুরু করলেন যে তার একটা কবুতরের এই সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি আমি খালি অবাক হয়ে শুনতে থাকলাম কি বলছেন উনি? মাথার চুল খাড়া হয়ে গেল ভুরু টা কুচকে গেল কিন্তু কিছু বললাম না বা বলার সুযোগ পেলাম না! অনেকেই আছেন, যে সব ধরনের ঔষধ আগে প্রয়োগ করেন তার পর আসেন, আর উনারা সব ধরনের ঔষধই প্রয়োগ করে থাকেন কোন প্রকার চিন্তা ভাবনা না করেই অনেকেই বলে থাকেন আরে ভাই আমি ত নতুন ভাই আপনি নতুন হন বা পুরাতন আপনি আপনার ক্ষেত্রে যেটা করেন না সেটা কেন সেই নিরীহ প্রাণীটার ক্ষেত্রে অবলীলায় করে থাকেন কেন? এটা কখনি ভালবাসা হতে পারে না। কিছুদিন আগে এক ভাই জানালেন যে উনি সমসসাই পড়ে একজন কে ফোন দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তাকে সাহায্য না করে সুধুই বলেছেন আরে মিয়া অনেক কষ্ট ও কাঠ খড় পুড়িয়ে অভিজ্ঞ হয়েছি, এত তাড়াতাড়ি যদি সব কিছু শিখিয়ে দিয় তাহলে কি হবে। আগে নিজে কিছু মূল্য দিয়ে নেন তার পর শিখেন। কি ধরনের নষ্ট মন মানসিকতা । আপনার জ্ঞানের কোন মূল্য নাই যদি না সেটা অপরের উপকারে আসে! আপনার জ্ঞানের কোন মূল্য নাই যদি সেটা আপনি অপরের সাথে শেয়ার করেন। আপনার জ্ঞানের কোন মূল্য নাই যদি না সেটা বাস্তবিক কাজে লাগে। মনে রাখবেন আল্লাহ্‌ কোরআন এ বলেছেন, “ভালোর পুরস্কার ভাল ছাড়া অন্য কিছু হবে? সুতরাং তোমাদের প্রভুর কোন আনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে?” (সুরা আল রহমান,আয়াত ৬০-৬১) আল্লাহ্‌ আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন গোনাহ করে, তা তারই দায়িত্বে থাকে। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। অতঃপর তোমাদেরকে সবাইকে প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অনন্তর তিনি তোমাদেরকে বলে দিবেন, যেসব বিষয়ে তোমরা বিরোধ করতে। ” (সূরা আন-আম, আয়াতঃ১৬৪)


হা আমি জানি একটা কবুতর অসুস্থ হলে কি ধরনের মানসিক অশান্তি ও পেরেশানি হয় তা হয়ত আমার থেকে ভাল কেউই জানে না। আমি সব ধরনের ঔষধ সব সময়ই মজুত করে রাখি যাতে কোন আপদ কালীন সময়ে আমাকে দৌড়া দৌড়ী করতে না হয়। কিন্তু যতই বলেন কথাই আছে না, কপালে থাকলে কেউই ঠেকাতে পারবে না। একজন ঘরামি ( যিনি ঘর মেরামত করেন) অন্যের ঘর ঠিক করেন কিন্তু নিজের ঘরের চাল থেকেই পানি পড়ে। আমি সাধারণত প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে আমার ছোট খামারতি তে সময় দিয়ে থাকি। কিন্তু গত ৩-৪ মাস, বিভিন্ন লোকের অনুরধে ও কাজে আমার সেই কাজ টা করা হই নি এর তাই হয়ত আমার নিজের অজান্তেই আমার খামারে রোগ এসে পড়েছে। এর সেটার বিরুদ্ধেই এখন আমাকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আর তখনি সেই গানটি মনে পড়ে যায়, “আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে কেন সৈকতে পড়ে আছি?” আল্লাহ্‌ যেন আমাকে এই যুদ্ধে জয়ী করেন।


পরিশেষে কোরআনের আয়াত দিয়ে শেষ করছি, আল্লাহ্‌ বলেন,“তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন এবং একে অন্যের উপর মর্যাদা সমুন্নত করেছেন, যাতে তোমাদের কে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন, যা তোমাদেরকে দিয়েছেন। আপনার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তি দাতা এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরা আন-আম, আয়াতঃ১৬৫)


মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই



আপনার কবুতর কে ঠিকমত লক্ষ্য করুন (কেস স্টাডি) BD Online Pigeon Market

আপনার কবুতর কে ঠিকমত লক্ষ্য করুন (কেস স্টাডি)

Pigeon Discussion

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন