সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৪

ভুল সবই ভুল (কবুতরের কেস স্টাডি) সপ্তম পর্ব

ভুল সবই ভুল (কবুতরের কেস স্টাডি) সপ্তম পর্ব


“যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক সুপারিশ করবে মন্দ কাজের জন্যে সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।“(সূরা আন নিসাঃআয়াত-৮৫)


একদিন বেশ কয়েক বছর আগে আমি মিরপুর ১ নং সেকশন এ এক বাসাই গেলাম সেটাও রোজার মাস ছিল। এশার আযান দিবে কিছুক্ষণের মদ্ধে বাসার সবাই দেখলাম ইফতার নিয়ে বসে আছে। অবাক হলাম! প্রশ্ন করলাম কি ব্যাপার? আপনারা সবাই এভাবে এখনও ইফতার না করে বসে আছেন? তারা একে অপরের দিকে চাইল এরপর মিচকি হেসে বলল, আসলে তোমরা তো জান না। যে কোরআন এ বলা আছে এ ব্যাপারে, আমি বললাম হা আলহামদুলিল্লাহ আমি জানি,আল্লাহ্‌ বলেছেন,আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত।“ (সূরা বাকারাঃআয়াত-১৮৭)


তারা আরও বলল এই যে রাত তোমরা তো সন্ধ্যাই ইফতার কর ফলে তোমাদের রোজা পূর্ণ হয়না। যেখানে রাতের কথা বলা হয়ে সেখানে তোমরা কিভাবে সন্ধ্যাই ইফতার কর। এভাবে আরও কিসু। নানা ছক আঁকা তিথির চিত্র দিল এ এর সাথে কিছু ব্যাখ্যা। আমি দেখার তা প্রয়োজন মনে করলাম না। আমি শুধু তর্ক না করে। প্রশ্ন করলাম। আই সুত্র আপনাদের কে দিল? ওরা বিশাল এক নামের অধিকারি এক তথা কথিত পীর সাহেবের নাম বলল, উনাদের পাশের বাসাই তার খানকা মানে আশ্রম যেটাই বলা হোক। তো অনেক সময় সেই বাসার পাশ দিয়ে আসার সময় আমি সেই বাসার জানালার ও দরজার গ্লাস ভাঙ্গা দেখতাম, কিন্তু তখন জানতাম না যে এটা সেই পীর সাহেবের বাসা। কিছু আল্লাহ্‌র বান্দা তার সুত্র মেনে নিতে না পেরে এ রূপ করেছে। যাই হোক আমি তাদের বুঝাতে চেষ্টা করলাম যে, আসলে ইসলামে রাত হয় সন্ধার পর আর এশা হল রাতের দ্বিতীয় প্রহর। কিন্তু তারা মানতে নারাজ, তারা বলল সৌদি তে তারা রাতে ইফতার করে, সি পীর সাহেব দেখে এসেছেন। এখন এক এক দেশের অবস্থান অনুযায়ী সে দেশের ইফতার হয়, সৌদি তে সন্ধ্যা যখন হয় তখন অন্ধকার হয়ে যাই, কিন্তু সেটাই হল ইফতারের সময়। যাই হোক তাদের আমি বুঝাতে পারলাম না। বুঝলাম ওদের মগজ ধোলাই ভাল মতই হয়েছে। আমাদের দেশে এ রকম অনেক পীর সাহেব আছেন যারা এ রকম নতুন তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, যেমন আমদের এখানে যেদিন ঈদ হয় তার আগেরদিন তারা ঈদ পালন করে রোজার আগের দিন থেকে রোজা রাখে। এভাবে কত লোকের ঈদ, রোজা, কোরবানি নষ্ট করে দিচ্ছে এই সব তথাকথিত পীর সাহেবরা তার কোন ইয়াত্তা নাই। এর জন্য দায়ী কে হবে? শুধু কি পীর সাহেবরা? নাকি যারা না বুঝে পালন করছে তারও? অবশ্যই তারাও এর পাপে পাপী হবেন, কারন এ জন্য আল্লাহ্‌ জ্ঞান অর্জন ফরজ করেছেন। কেউ যদি সেটা না করেন তাহলে, ফরজ তরখ করার পাপে পাপী হবেন। কোন সন্ধেহ নাই। সব চেয়ে মজার বিষয় হল এই সকল পীর সাহেবরা কিন্তু নামাজ সৌদির সময় অনুযায়ী পড়েন না (যদিও আমার দেখা ও জানা মতে কোন পীরকে নামাজ পড়তে দেখি না। একবার একজন কে নামজের ব্যাপারে প্রশ্ন করাই তার খাদেম বলল, হুজুর মক্কা গিয়ে নামাজ পড়েন, কিভাবে? বলল রূহানী ভাবে, আমি বললাম তাহলে খাবার কেন রূহানী ভাবে খান না, পায়খানা কেন রূহানী ভাবে করেন না। সে আমার উপর যার পনাই না বিরক্ত হল। যাই হোক এরা খাবার সেই অনুযায়ী খান না। সৌদির সময় অনুযায়ী ঘুমান না। কিন্তু শুধু ঈদ, রোজা এগুলো পালন করেন। আর এভাবেই নতুন তথ্য বা কথা বা মতবাদ প্রচার করেই পীর হওয়া যাই আমাদের এই দেশে। কিন্তু এই সব পীর সাহেবদের ভাগ্য ভাল এটা যদি সৌদি হত তাহলে তাদের হয় কোন শুক্রবারে সেই মসজিদের সামনে শিরছেদ হতে দেখা যেত। যাই হোক আমাদের দেশে কবুতর জগতের কিছু মানুষ আছেন যারা এই সব পীর সাহেবদের মত জানুক আর না জানুক কোন অভিজ্ঞতা থাকুক আর নাই থাকুক একটা কথা বলে দেন, লাগলে লাগল না লাগলে না লাগল। কিছুই যাই আসে না।


আল্লাহ্‌ বলেন, “যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।“(সূরা বনী ঈসরাইলঃআয়াত-৩৬)


আমি আমার নানা পোস্ট এর মাধ্যমে সকল কবুতর খামারিদের এই ধরনের বেশী জানা লোকদের সম্পর্কে সর্বদা সতর্ক করে আসছি। কিন্তু কে শুনে কার কথা, ব্যাপারটা অনেকটা এ রকম, “তোরা যে বলবি বল আমি কান করেছি ঢোল।“ আমাদের কানে উপদেশ বানী ঢুকে না সহজে, যতক্ষণ না আমরা চরম মূল্য না দেয়। আমাদের এই কবুতর সেক্টরটা আজ অনেক উন্নতি করার কথা ছিল। কারন আমাদের আবহাওয়া কবুতর প্রজননের জন্য আদর্শ যা, বিশ্বের আর কোন দেশে নাই। কিন্তু তারপর হয় না এই ধরনের বেশী জানা লোক আর কিছু দুষ্ট দালাল চক্র ও মুনাফাভগি খামারির কারনে।


অর্থনীতিবিদরা বলেন,” নিকৃষ্ট মুদ্রা, উৎকৃষ্ট মুদ্রাকে বাজার থেকে বিতাড়িত করে।“ অর্থনীতির এই সুত্র আজ কবুতর সেক্টরে বেশ প্রভাব ফেলেছে। এখানে খারাপ ও নিকৃষ্ট দালাল চক্র, খারাপ খামারি মানুষের কারনে। দশম শ্রেনিতে পাটীগণিতের একটা অংক করেছিলাম যে, একটা তৈলাক্ত বাঁশে একটা বানর ১ মিনিটে ৪ ফিট উঠে ও পরের মিনিটে ৩ ফিট নেমে যাই, আমাদের এই সেক্টরের অবস্থা সেই বানরের অংকের থেকেও খারাপ এখানে আমরা ৮ ফিট উঠি কিন্তু ৫ ফিট নেমে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আর এই মধ্যে গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত হয়েছেন। আমাদের দেশের তথা কথিক ডিগ্রি ধারি কিছু পেশাদার পশু ডাক্তাররা। আমাদের দেশের ভেটেনারি ডাক্তাররা সবারই হাঁস মুরগি, গরু ছাগল, ভেড়া এগুলো নিয়ে পড়াশুনা করে থাকেন। আমার ধারনা কবুতরের অ্যানাটমি সম্পর্কে তাদের কোন ধারনাই নাই। আর এই সব ডাক্তারদের নামের পাশে ডিগ্রি দেখলে চোখ ব্যাথা হয়ে যাই, পুরো ডিগ্রি গুলো পড়তে ২-৩ মিনিত সময় লাগে। এই সব ডাক্তারদের ধারনা তারা সব জানে, আর ধারনা হবেই বা না কেন আমাদের মত যত সব জ্ঞান অন্ধ মানুষদের যা অনায়াসে পেয়ে যান তারা। এসব ডাক্তাররা কবুতর মারা গেলে প্রথমে তাদের হাত পাকানর জন্য বলেন, কবুতর নিয়ে আসেন পরিক্ষা করতে হবে, আর এরপর ময়না তদন্ত করে বলেন হয় রানিখেত হয়েছিল বা ম্যালেরিয়া হয়েছিল। আমি আজ পর্যন্ত কোন ময়না তদন্তে অন্য কোন তথ্য পাইনি। যেগুলো ডিপথেরিয়া হয়েছিল সেগুলোও রানিখেত বা ম্যালেরিয়া আর যেগুলোর সাল্মিনিল্লা হয়েছিল সেগুলোর রিপোর্ট ও একই!!!?


ব্যাপারটা আমাকে এক গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয়। এক লোক তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে এসেছেন। মাস্টার তাকে জিজ্ঞাস করলেন, গরু নিয়ে একটা গল্প বলত? ছেলেটি শুরু করল এক মাঠে একটা গরু চরছিল গরুটা যেই নদীতে পানিখেতে গেছে অমনী কুমির এসে গরুটিকে কপ করে খেয়ে ফেলল। মাস্টার মশাই তাকে আবার জিজ্ঞাস করলেন, আচ্ছা বলত উট কি খাই? সে উত্তর দিল, উট অনেক কিছু খাই কিন্তু একবার কি হয়েছে জানেন একটা উট খাবার খাওয়ার পর পানি খেতে যেই কুয়ার পাশে গেছে অমনি কুয়ার ভিতর থেকে একটা কুমির এসে উটটাকে কপ করে খেয়ে ফেলল। মাস্টার মশাই খুবই চিন্তায় পড়লেন কি করা যাই। আচ্ছা এবার বলত, মানুষরা উড়োজাহাজে কিভাবে যাই। সে উত্তর দিল, আকাশে উড়ে যাই, কিন্তু একবার কি হয়েছে জানেন একটা মানুষ এই ভাবে উড়োজাহাজে করে যাচ্ছিল অমনি উড়োজাহাজের তলা খুলে নদীতে পড়ল অমনি একটা কুমির এসে, লোকটিকে কপ করে খেয়ে ফেলল। মাস্টার মশাই এ কথা শুনে মাথার চুল ছিরতে লাগলেন। আমাদের ভেটেনারি ডাক্তারদের অবস্থা এই বালকটির মত অবস্থা হয়েছে। এ থেকে নিস্তার পাওয়ার রাস্তা আমার জানা নেই।


আল্লাহ্‌ বলেন, “যখন ফিরে যায় তখন চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণনাশ করতে পারে। আল্লাহ ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না।“(সূরা আল বাক্বারাহঃআয়াত-২০৫)


অনেক নতুন বা পুরাতন খামারি আছেন যারা এ সব তথাকথিত পরামর্শ দানকারী ও ভেটেনারি ডাক্তারদের দউরাত্তে অনেক খামারি নিঃস্ব হয়ে কবুতর পালন ছেড়েই দিয়েছেন। কিন্তু তাতে ক্ষতি কার আমাদের সবারই। এই ধরনের লোকরা নিজেদের অনেক জ্ঞানী মনে করেন। আর অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে না জানে অনর্থক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রোগের লক্ষণ না জেনেই। এরা এদের কাজ কে অনেক পুণ্য করছে বলে মনে করে থাকেন। আসলেই কি তাই?


আল্লাহ্‌ বলেন, “শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলী সুশোভিত করে দিয়েছে। অতঃপর তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতএব তারা সৎপথ পায় না।“(সূরা নমলঃআয়াত-২৪)


অনেকেই হয়ত ইতিমধ্যেই ভাবতে শুরু করেছেন কেন এ সব কথা বলছি? এর কারন আজ এক খামারির দুঃখ দূরদর্শার কথা শুনে ও ছবি দেখে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। এই খামারি কে প্রথমে একজন ডিপথেরিয়ার চিকিৎসা দিয়েছিলেন। পরে ভাল না হওয়ায় উক্ত খামারি ভেটেনারি ডাক্তারের কাছে গেলেন যার ডিগ্রির শেষ নাই। তিনি আবার আগে কিউরেটর ছিলেন এক জু’তে, (তাই ভাবলাম এ জন্যই আমাদের এই জু এর এই অবস্থা।) যাইহোক, তিনি তাকে অনেক গুলো অ্যান্টিবায়োটিক দিলেন সাথে কিছু ভিটামিন। এতেও কোন কাজ হলনা। সব কবুতর গুলো মারা গেল। সেগুলো টেস্ট করার পর তিনি মতামত দিলেন যে এগুলোর রানিখেত হয়েছে। যাই হোক ডাক্তার বলে কথা। আমার মনে হচ্ছিল তাকে কল করে কিছু কথা বলি, কিন্তু ভাবলাম এখন যদি আমি বলতে যাই উনি বলবেন, আপনার কি ডিগ্রি আছে? আমি জানেন ডিগ্রি ধারি। কিন্তু ডিগ্রিধারী বলে এর এ রকম অপব্যাবহার করবে? কিছু বলার নাই। এদের জন্য ভাল হবার, ও সঠিক জ্ঞান অর্জন করার দোয়া করা ছাড়া। আর যারা আছেন উনাদের কোথাই উঠেন ও বসেন তাদের জন্য দোয়া করতে হবে। আল্লাহ যেন তাদের বুঝদার বানিয়ে দেন।


আল্লাহ্‌ আরও বলেন,” শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়।“(সূরা ফাতিরঃআয়াত-৬)


এদের ব্যাপারে বলে শেষ করা যাবে না, যতই চেষ্টা করা হোক না কেন। এরা সুধরাবে না। এখন এদের ভাল হবার জন্য দোয়া করা ছাড়া আমাদের এই সেক্টর কে বাচান খুবই কঠিন হবে। আর যদি তাই হয় তাহলে আমারও এর দায়িত্ব আমাদের ঘারেও এসে পরে এটাকে আমরা সহজে এড়িয়ে যেতে পারব না।


আল্লাহ্‌ বলেন,

“এরা যে রয়েছে, এরাই হলে শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না। আর তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তবে আমাকে ভয় কর।“(সূরা আল ইমরানঃআয়াত১৭৫)


পরিশেষে, আমারা সবাই সবার জন্য দোয়া করি,কারন আমাদের আত্মা অপবিত্র হয়ে গেছে কোন ঔষধে বা উপদেশে এটার কাজ হবে না দোয়া ছাড়া।


আল্লাহ্‌ বলেন,”আর তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।“(সূরা আন নিসাঃআয়াত-৮৬)


“যখন তাদেরকে বোঝানো হয়, তখন তারা বোঝে না।“ সূরা আস-সাফফাতঃআয়াত-১৩


মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই



ভুল সবই ভুল (কবুতরের কেস স্টাডি) সপ্তম পর্ব BD Online Pigeon Market

ভুল সবই ভুল (কবুতরের কেস স্টাডি) সপ্তম পর্ব

Pigeon Discussion, Pigeon Diseases & treatment

শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০১৪

বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৪

For sale chuital and spring gola Fantail pigeon pair

For sale chuital and spring gola Fantail pigeon pair



For sale chuital and spring gola Fantail pigeon pair BD Online Pigeon Market

For sale chuital and spring gola Fantail pigeon pair

Yellow German shield pigeon pair for sale

Yellow German shield pigeon pair for sale



Yellow German shield pigeon pair for sale BD Online Pigeon Market

Yellow German shield pigeon pair for sale

King pigeon Pair For sale 0 feather ring blood

King pigeon Pair For sale 0 feather ring blood



King pigeon Pair For sale 0 feather ring blood BD Online Pigeon Market

King pigeon Pair For sale 0 feather ring blood

কবুতরের ভ্যাকসিন/টিকা (Pigeon Vaccine)

কবুতরের ভ্যাকসিন/টিকা (Pigeon Vaccine)


একজন নতুন হিসাবে যখন কবুতর পালন শুরু করেন তখন তাঁর মনে কবুতর পালন সম্পর্কে একটা নেগেটিভ ধারনা দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সেই কবুতর পালক প্রথম থেকেই একটা নার্ভাস অবস্থার মধ্যে দিনপাত করে। সামান্য কিছু হলেই ভয় ও আতঙ্ক তাকে গ্রাস করে ফেলে, ফলে তখন তিনি বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শের জন্য ছুটে যান। আর পরামর্শ দাতা জানুক আর নাই জানুক তাকে একটা পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। ফলে সেই নতুন কবুতর পালক নিজের অজান্তেই দিঙ্কয়েক এর মধ্যে মোটামুটি সব ধরনের ঔষধের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেলেন। যদি কবুতরের ভাগ্য ভাল থাকে,আর তাঁর জীবন লাইন যদি দীর্ঘ হয় তাহলে হয়ত সেই যাত্রাই বেচে যেতে পারে। আর যদি কবুতরটি মারা যায় তখন মনকে সান্তনা দেন যে তাঁর হায়াত ছিল না। এটাই হল আমাদের সাধারন চিত্র। আর এই চিত্রের সূত্রপাত হয় কুবুতরের ভ্যাকসিন দিয়ে। তাই অধিকাংশ কবুতর পালকের প্রথম কয়েকটি সাধারন যে প্রশ্ন থাকে, তাঁর কয়েকটি হল।


১) কোন ভ্যাকসিন দিব?

২) কয় মাস পর পর দিব?

৩) কভাবে দিব? ইত্যাদি ইত্যাদি।


আর যতক্ষণ পর্যন্ত সেই কাঙ্ক্ষিত ভ্যাকসিন না দেন ততক্ষণ পর্যন্ত, সেই কবুতর খামারি মানসিক ভাবে প্রশান্তি লাভ করেন না। কিন্তু দুখজনক হলেও সত্য যে, এই ভ্যাকসিন সম্পর্কে আমাদের দেশে খুব কম লোকেরই সঠিক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আছে। অনেকেরই ধারনা যে ভ্যাকসিনই সকল সমস্যার সমাধান। ভ্যাকসিন না দিলে কবুতর মারা যাবে, ভ্যাকসিন না দিলে কবুতর টাল হয়ে যাবে………। এ রকম নানা ধরনের কল্প কাহিনী ও ধারনা নিয়ে অধিকাংশ খামারি কবুতর পালন করেন। আমি যদিও এর আগে [PMV,PPMV,PMV1(New Castle)] নিয়ে পোষ্ট দেওয়া হয়েছিল। তারপরও ভ্যাকসিন সম্পর্কে আরও ভাল ধারনা দেবার লক্ষে আমার আজকের এই ছোট প্রয়াস। আশা করি এই পোষ্ট পড়ে খামারিরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। আর তাহলেই আমার লিখাটা সার্থকতা লাভ করবে।


এখন আসুন আমারা জেনে নেই ভ্যাকসিন কি? এর উপকারিতা কি? কি ধরনের ভ্যাকসিন দিয়া উচিৎ? কখন ভ্যাকসিন দিয়া যায়…?


ভ্যাকসিন এর সংজ্ঞাঃ

নির্দিষ্ট রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যাবহ্রিত এক ধরনের বিশেষ টিকা। যা সেই রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু থেকে তৈরি করা হয়। সেই নির্দিষ্ট রোগের প্রতিরোধক হিসাবে। অসুস্থতা, অক্ষমতা, এবং মৃত্যু সৃষ্টিকারী অনেক রোগ এখন টিকা ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। ভ্যাকসিন বা টিকা অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে ও তথাকথিত সেলুলার ইমিউন সিস্টেম উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে।


ভ্যাকসিনের প্রকারঃ

ভ্যাকসিন সাধারণত ২ ধরনের


১)লাইভ ভ্যাকসিন ও ২) কিলড ভ্যাকসিন।


১)লাইভ ভ্যাকসিনঃ

একটি ক্ষয়িত টীকা বা প্যাথোজেন যার তীব্রতা হ্রাস করে তৈরি একটা টীকা। যা দুর্বল সংক্রামক এজেন্ট কে নির্মূল করতে কাজ করে যা নির্দোষ বা কম উৎকট হয়ে পরিবর্তিত হয়। ভাইরাস “হত্যা” দ্বারা এই টিকা উত্পাদিত হয়।


এই টিকা স্বল্প সময়ের জন্য দিয়া হয় ও শরীরের বাইরে প্রয়োগ করা হয়।


২) কিলড ভ্যাকসিনঃ

অক্রিয়াশীল বা কিছু উপায়ে হত্যা করা হয়েছে এমন একটি সংক্রামক এজেন্ট থেকে তৈরি একটা টীকা।

এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য দিয়া হয় ও শরীরের ভিতরে প্রয়োগ করা হয়।


সতর্কতাঃ
) লাইভ ভ্যাকসিন প্রয়োগের ব্যাপারে নির্দিষ্ট ও খুব সতর্কতা পালন করতে হয়। যেমনঃ মাস্ক,গ্লভস পরিধান করা ও খেয়াল রাখতে হয় যেন ভ্যাকসিন মাটিতে না পড়ে বা অবশিষ্ট বা বেচে যাওয়া ভ্যাকসিন পুতে ফেলতে হয়।


) সুস্থ প্রদর্শিত সমস্ত পায়রা ভ্যাকসিন করা যেতে পারে।


) চিকিত্সাগতভাবে অসুস্থ এবং নির্বল পায়রা ভ্যাকসিন করা যাবে না।


) ডিম পাড়বে এমন কবুতর কে ভ্যাকসিন বা টিকা দিয়া যাবে না।


) ভ্যাকসিন এর সাথে দিয়া ঔষধ ছাড়া বাইরের অন্য কোন ভ্যাকসিন এর ঔষধ মিক্স আপ করা যাবে না।


) ভ্যাকসিন দোকান/পরিবহন কালে বা ফ্রিজে (২°সেঃ থেকে ৪° সেঃ) এর তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।বরফে পরিণত করবেন না। আলো থেকে রক্ষা করতে হবে মানে সূর্যের আলো যেন না পড়ে।


) লেবেল ছাড়া কোন ভ্যাকসিন দিবেন না, আর মেয়াদ দেখে নিবেন।


) কৃমির ঔষধ ও ভ্যাকসিন কাছাকাছি সময়ের ব্যাবধানে দেয়া যাবে না।


) স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে অন্য ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না।


ভ্যাকসিন বা টিকার জন্য উপযুক্ত সময় নীচে দেওয়া হল:


) স্টক প্রজনন জোড়ার মেটিং এর ৪-৬ সপ্তাহ আগে।


) ইয়াং পায়রা নীড় মধ্যে ৪ দিন বয়সের আগে।


) রেসিং সিজন শুরু করার ৪-৬ সপ্তাহ আগে।


) প্রদর্শনী জন্য কবুতরকে ৪-৬ সপ্তাহ পূর্বে ।


ভ্যাকসিন বা টিকা দিবার আগে করনীয়ঃ


কৃমির ঔষধ দিবার যে নিয়ম পালন করা হয়, ভ্যাকসিন এর ও ক্ষেত্রে অনেক একই নিয়ম অনুসরন করা ভাল। যেমনঃ


) বেশি গরমে ভ্যাকসিন দিয়া যাবে না।


) ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার আগে সুষম খাদ্য দিতে হবে।


) লিভার টনিক দিতে হবে।


) সকালে বা রাতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা ভাল।


) ভ্যাকসিন দিবার দিন স্যালাইন দিতে হবে। প্রয়োজনে চালের স্যালাইন দিয়া যেতে পারে।


) ভ্যাকসিন দিবার একদিন পর থেকে ৩ দিন মাল্টি ভিটামিন দিতে হবে।


) পায়ে বা পাখায় ভ্যাকসিন পুশ করা যাবে না।


) সব ধরনের ভ্যাকসিন এর ক্ষেত্রে একই নিয়ম মেনে চলতে হবে।


ভ্যাকসিন করার নিয়মঃ কিলড ভ্যাকসিন পুশ গান বা ইনসুলিন এর সিরিঞ্জ দিয়ে ভ্যাকসিন করতে হয়। পুচ্ছ থেকে ঘার অভিমুখে শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তে পায়রা প্রতি 0.২ মিলি পরিমান ইনজেকশন পুশ করতে হয়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন মাথার পিছনে না পুশ করা হয় বা হাড্ডিতে সূচ না লাগে। এতে কবুতর প্যারালাইস হবার সম্ভাবনা থাকে। লাইভ ভ্যাকসিন সাধারণত ১ চোখে বা ১ নাকে ১ ফোঁটা করে দিতে হয়। সব ক্ষেত্রেই সব গুলো ঔষধ একসঙ্গে মিক্স করতে হয়। ভ্যাকসিন ভায়াল খোলার পর ২ ঘণ্টা সময় পর্যন্ত ব্যাবহারের জন্য উপযুক্ত থাকে।


pigeon-vaccination


ভ্যাকসিন ইমিউনিটি স্থিতিকাল বা সময়: কিলড ভ্যাকসিন ১২ মাস। লাইভ ভ্যাকসিন ৩০-৪৫ দিন পর পর।


আমাদের দেশে ব্যাপক ভাবে কবুতর ভ্যাকসিন আমদানি করা হয়না। যেগুলো সহজলভ্য। সেগুল সবই হাঁস বা মুরগির (পলট্রি এর জন্য প্রযোজ্য)। এগুলো কততুকু কাজে আসে সেগুল নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিন্তু তবুও এক বিচিত্র কারনে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বা এক্সপার্ট হিসাবে দাবীকৃত কিছু লোক সকল কবুতর খামারিকে এই ধরনের ভ্যাকসিন ব্যাবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, যেভাবে তারা এটার ব্যাবহার এর পরামর্শ দেন সেটাও সম্পূর্ণ রূপে ভুল আর ভুল। এমনকি তারা এইসব কোম্পানির লিখা নির্দেশ ও ঠিক মত পালন করতে বলেন না। ফলে ভ্যাকসিন এর উপকারিতা থেকে অপকারিতাই বেশি হয়। যে সকল কাজের ভ্যাকসিন আছে। সেগুল ব্যাক্তিগত উদ্যোগে আনা হয়। যা কিনা সাধারন মানুষ কিনতে গেলে গায়ের লোম খারা হয়ে যাবে এর দাম শুনে। এইসব স্বার্থান্বেষী ব্যাবসায়ি বেশি মুনাফার আশায় বাংলাদেশের বাইরে থেকে এই ধরনের ভ্যাকসিন নিয়ে আসে ও ১০ গুন দামে বিক্রি করে থাকেন। আমাদের দেশে কবুতরের অবকাঠামো উন্নয়ন এর জন্য এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নিয়া হয়নি। দু একটা ছাড়া। যায় হোক আমার বাক্তিগত পরামর্শ সকল কবুতর খামারিদের যদি ভ্যাকসিন সত্যিই করতে চান। তাহলে উন্নত মানের ভ্যাকসিন ব্যাবহার করুন আর তা না হলে ভ্যাকসিন দিয়া থেকে বিরত থাকুন। কারন যদি সত্যি সত্যি পারামক্সি ভাইরাস দ্বারা আপনার খামার আক্রান্ত আপনি কিছু বুঝার আগেই আপনার পুরো খামার সাফ হয়ে যাবে, তা এই so called ভ্যাকসিন দিয়া থাকুক আর নাই থাকুক এতে কোন কাজে আসবে না। অনেকে বলে থাকেন ভ্যাকসিন ৬ মাস দিলেয় হয়। কিন্তু এইসব লোক আসলে ভুলের রাজ্যে বাস করে। আপনি যদি ভ্যাকসিন দিয়া শুরু করেন তাহলে অবশ্যই সারা বছর ভ্যাকসিন দিয়া উচিৎ। আর তা না হলে হিতে বিপরিত হতে পারে। তাঁর দায়দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। সেই সব উপদেশ কারীকে তখন আপনার পাশে পাবেন না। তবে আপনি যদি ৩ টি কাজ ঠিক মত করে থাকেন তাহলে আপনাকে আপনার খামার নিয়ে চিন্তিত থাকতে হবে না।


১) খামার পরিস্কার রাখা।
২) সাল্মিনিল্লা কোর্স করা।
৩) কৃমির ঔষধ প্রয়োগ করা।


এখন আসুন আমরা জেনে নি কি ধরনের ভ্যাকসিন আপনি ব্যাবহার করলে সত্তিকারের উপকৃত হবেন। একটা কথা খেয়াল রাখবেন, প্যারামক্সি ভ্যাকসিন ছাড়া অন্য যে সকল ভ্যাকসিন আছে সেগুলর ব্যাবহারিক কার্যকারিতা খুব একটা নাই।


কি ধরনের ভ্যাকসিন বা টিকা কবুতরের জন্য উপযুক্তঃ
১) chevivac-P200 Vaccine
২) Colombovac PMV Vaccine
৩) Avian PMV vaccine


আপনি আপনার কবুতরের একমাত্র অভিভাবক আর তাই আপনার কবুতরের ভালমন্দ আপনাকেই বুঝতে হবে। তাই নিজের বিবেক বুদ্ধি ব্যাবহার করবেন। কোনটা আপনার কবুতরের জন্য ভাল আর কোনটা না সেটা আপনি ছাড়া আর ভাল কেউ বুঝবে না। কারন আপনার কবুতর যখন মারা যাবে বা কোন ক্ষতি হবে তখন অন্য সকলের আফসোস করা ছাড়া আর কোন কিছু করার থাকবে না। সফল হলে যেমন আপনার লাভ তেমনি অসফল হলেও আপনারই ক্ষতি। তাই বিচার বিবেচনা আপনারই হাতে।


মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই



কবুতরের ভ্যাকসিন/টিকা (Pigeon Vaccine) BD Online Pigeon Market

কবুতরের ভ্যাকসিন/টিকা (Pigeon Vaccine)

Pigeon Discussion, Pigeon Diseases & treatment