ভুল সবই ভুল (কবুতরের কেস স্টাডি) সপ্তম পর্ব
“যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক সুপারিশ করবে মন্দ কাজের জন্যে সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।“(সূরা আন নিসাঃআয়াত-৮৫)
একদিন বেশ কয়েক বছর আগে আমি মিরপুর ১ নং সেকশন এ এক বাসাই গেলাম সেটাও রোজার মাস ছিল। এশার আযান দিবে কিছুক্ষণের মদ্ধে বাসার সবাই দেখলাম ইফতার নিয়ে বসে আছে। অবাক হলাম! প্রশ্ন করলাম কি ব্যাপার? আপনারা সবাই এভাবে এখনও ইফতার না করে বসে আছেন? তারা একে অপরের দিকে চাইল এরপর মিচকি হেসে বলল, আসলে তোমরা তো জান না। যে কোরআন এ বলা আছে এ ব্যাপারে, আমি বললাম হা আলহামদুলিল্লাহ আমি জানি,আল্লাহ্ বলেছেন,আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত।“ (সূরা বাকারাঃআয়াত-১৮৭)
তারা আরও বলল এই যে রাত তোমরা তো সন্ধ্যাই ইফতার কর ফলে তোমাদের রোজা পূর্ণ হয়না। যেখানে রাতের কথা বলা হয়ে সেখানে তোমরা কিভাবে সন্ধ্যাই ইফতার কর। এভাবে আরও কিসু। নানা ছক আঁকা তিথির চিত্র দিল এ এর সাথে কিছু ব্যাখ্যা। আমি দেখার তা প্রয়োজন মনে করলাম না। আমি শুধু তর্ক না করে। প্রশ্ন করলাম। আই সুত্র আপনাদের কে দিল? ওরা বিশাল এক নামের অধিকারি এক তথা কথিত পীর সাহেবের নাম বলল, উনাদের পাশের বাসাই তার খানকা মানে আশ্রম যেটাই বলা হোক। তো অনেক সময় সেই বাসার পাশ দিয়ে আসার সময় আমি সেই বাসার জানালার ও দরজার গ্লাস ভাঙ্গা দেখতাম, কিন্তু তখন জানতাম না যে এটা সেই পীর সাহেবের বাসা। কিছু আল্লাহ্র বান্দা তার সুত্র মেনে নিতে না পেরে এ রূপ করেছে। যাই হোক আমি তাদের বুঝাতে চেষ্টা করলাম যে, আসলে ইসলামে রাত হয় সন্ধার পর আর এশা হল রাতের দ্বিতীয় প্রহর। কিন্তু তারা মানতে নারাজ, তারা বলল সৌদি তে তারা রাতে ইফতার করে, সি পীর সাহেব দেখে এসেছেন। এখন এক এক দেশের অবস্থান অনুযায়ী সে দেশের ইফতার হয়, সৌদি তে সন্ধ্যা যখন হয় তখন অন্ধকার হয়ে যাই, কিন্তু সেটাই হল ইফতারের সময়। যাই হোক তাদের আমি বুঝাতে পারলাম না। বুঝলাম ওদের মগজ ধোলাই ভাল মতই হয়েছে। আমাদের দেশে এ রকম অনেক পীর সাহেব আছেন যারা এ রকম নতুন তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, যেমন আমদের এখানে যেদিন ঈদ হয় তার আগেরদিন তারা ঈদ পালন করে রোজার আগের দিন থেকে রোজা রাখে। এভাবে কত লোকের ঈদ, রোজা, কোরবানি নষ্ট করে দিচ্ছে এই সব তথাকথিত পীর সাহেবরা তার কোন ইয়াত্তা নাই। এর জন্য দায়ী কে হবে? শুধু কি পীর সাহেবরা? নাকি যারা না বুঝে পালন করছে তারও? অবশ্যই তারাও এর পাপে পাপী হবেন, কারন এ জন্য আল্লাহ্ জ্ঞান অর্জন ফরজ করেছেন। কেউ যদি সেটা না করেন তাহলে, ফরজ তরখ করার পাপে পাপী হবেন। কোন সন্ধেহ নাই। সব চেয়ে মজার বিষয় হল এই সকল পীর সাহেবরা কিন্তু নামাজ সৌদির সময় অনুযায়ী পড়েন না (যদিও আমার দেখা ও জানা মতে কোন পীরকে নামাজ পড়তে দেখি না। একবার একজন কে নামজের ব্যাপারে প্রশ্ন করাই তার খাদেম বলল, হুজুর মক্কা গিয়ে নামাজ পড়েন, কিভাবে? বলল রূহানী ভাবে, আমি বললাম তাহলে খাবার কেন রূহানী ভাবে খান না, পায়খানা কেন রূহানী ভাবে করেন না। সে আমার উপর যার পনাই না বিরক্ত হল। যাই হোক এরা খাবার সেই অনুযায়ী খান না। সৌদির সময় অনুযায়ী ঘুমান না। কিন্তু শুধু ঈদ, রোজা এগুলো পালন করেন। আর এভাবেই নতুন তথ্য বা কথা বা মতবাদ প্রচার করেই পীর হওয়া যাই আমাদের এই দেশে। কিন্তু এই সব পীর সাহেবদের ভাগ্য ভাল এটা যদি সৌদি হত তাহলে তাদের হয় কোন শুক্রবারে সেই মসজিদের সামনে শিরছেদ হতে দেখা যেত। যাই হোক আমাদের দেশে কবুতর জগতের কিছু মানুষ আছেন যারা এই সব পীর সাহেবদের মত জানুক আর না জানুক কোন অভিজ্ঞতা থাকুক আর নাই থাকুক একটা কথা বলে দেন, লাগলে লাগল না লাগলে না লাগল। কিছুই যাই আসে না।
আল্লাহ্ বলেন, “যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।“(সূরা বনী ঈসরাইলঃআয়াত-৩৬)
আমি আমার নানা পোস্ট এর মাধ্যমে সকল কবুতর খামারিদের এই ধরনের বেশী জানা লোকদের সম্পর্কে সর্বদা সতর্ক করে আসছি। কিন্তু কে শুনে কার কথা, ব্যাপারটা অনেকটা এ রকম, “তোরা যে বলবি বল আমি কান করেছি ঢোল।“ আমাদের কানে উপদেশ বানী ঢুকে না সহজে, যতক্ষণ না আমরা চরম মূল্য না দেয়। আমাদের এই কবুতর সেক্টরটা আজ অনেক উন্নতি করার কথা ছিল। কারন আমাদের আবহাওয়া কবুতর প্রজননের জন্য আদর্শ যা, বিশ্বের আর কোন দেশে নাই। কিন্তু তারপর হয় না এই ধরনের বেশী জানা লোক আর কিছু দুষ্ট দালাল চক্র ও মুনাফাভগি খামারির কারনে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন,” নিকৃষ্ট মুদ্রা, উৎকৃষ্ট মুদ্রাকে বাজার থেকে বিতাড়িত করে।“ অর্থনীতির এই সুত্র আজ কবুতর সেক্টরে বেশ প্রভাব ফেলেছে। এখানে খারাপ ও নিকৃষ্ট দালাল চক্র, খারাপ খামারি মানুষের কারনে। দশম শ্রেনিতে পাটীগণিতের একটা অংক করেছিলাম যে, একটা তৈলাক্ত বাঁশে একটা বানর ১ মিনিটে ৪ ফিট উঠে ও পরের মিনিটে ৩ ফিট নেমে যাই, আমাদের এই সেক্টরের অবস্থা সেই বানরের অংকের থেকেও খারাপ এখানে আমরা ৮ ফিট উঠি কিন্তু ৫ ফিট নেমে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আর এই মধ্যে গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত হয়েছেন। আমাদের দেশের তথা কথিক ডিগ্রি ধারি কিছু পেশাদার পশু ডাক্তাররা। আমাদের দেশের ভেটেনারি ডাক্তাররা সবারই হাঁস মুরগি, গরু ছাগল, ভেড়া এগুলো নিয়ে পড়াশুনা করে থাকেন। আমার ধারনা কবুতরের অ্যানাটমি সম্পর্কে তাদের কোন ধারনাই নাই। আর এই সব ডাক্তারদের নামের পাশে ডিগ্রি দেখলে চোখ ব্যাথা হয়ে যাই, পুরো ডিগ্রি গুলো পড়তে ২-৩ মিনিত সময় লাগে। এই সব ডাক্তারদের ধারনা তারা সব জানে, আর ধারনা হবেই বা না কেন আমাদের মত যত সব জ্ঞান অন্ধ মানুষদের যা অনায়াসে পেয়ে যান তারা। এসব ডাক্তাররা কবুতর মারা গেলে প্রথমে তাদের হাত পাকানর জন্য বলেন, কবুতর নিয়ে আসেন পরিক্ষা করতে হবে, আর এরপর ময়না তদন্ত করে বলেন হয় রানিখেত হয়েছিল বা ম্যালেরিয়া হয়েছিল। আমি আজ পর্যন্ত কোন ময়না তদন্তে অন্য কোন তথ্য পাইনি। যেগুলো ডিপথেরিয়া হয়েছিল সেগুলোও রানিখেত বা ম্যালেরিয়া আর যেগুলোর সাল্মিনিল্লা হয়েছিল সেগুলোর রিপোর্ট ও একই!!!?
ব্যাপারটা আমাকে এক গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয়। এক লোক তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে এসেছেন। মাস্টার তাকে জিজ্ঞাস করলেন, গরু নিয়ে একটা গল্প বলত? ছেলেটি শুরু করল এক মাঠে একটা গরু চরছিল গরুটা যেই নদীতে পানিখেতে গেছে অমনী কুমির এসে গরুটিকে কপ করে খেয়ে ফেলল। মাস্টার মশাই তাকে আবার জিজ্ঞাস করলেন, আচ্ছা বলত উট কি খাই? সে উত্তর দিল, উট অনেক কিছু খাই কিন্তু একবার কি হয়েছে জানেন একটা উট খাবার খাওয়ার পর পানি খেতে যেই কুয়ার পাশে গেছে অমনি কুয়ার ভিতর থেকে একটা কুমির এসে উটটাকে কপ করে খেয়ে ফেলল। মাস্টার মশাই খুবই চিন্তায় পড়লেন কি করা যাই। আচ্ছা এবার বলত, মানুষরা উড়োজাহাজে কিভাবে যাই। সে উত্তর দিল, আকাশে উড়ে যাই, কিন্তু একবার কি হয়েছে জানেন একটা মানুষ এই ভাবে উড়োজাহাজে করে যাচ্ছিল অমনি উড়োজাহাজের তলা খুলে নদীতে পড়ল অমনি একটা কুমির এসে, লোকটিকে কপ করে খেয়ে ফেলল। মাস্টার মশাই এ কথা শুনে মাথার চুল ছিরতে লাগলেন। আমাদের ভেটেনারি ডাক্তারদের অবস্থা এই বালকটির মত অবস্থা হয়েছে। এ থেকে নিস্তার পাওয়ার রাস্তা আমার জানা নেই।
আল্লাহ্ বলেন, “যখন ফিরে যায় তখন চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণনাশ করতে পারে। আল্লাহ ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না।“(সূরা আল বাক্বারাহঃআয়াত-২০৫)
অনেক নতুন বা পুরাতন খামারি আছেন যারা এ সব তথাকথিত পরামর্শ দানকারী ও ভেটেনারি ডাক্তারদের দউরাত্তে অনেক খামারি নিঃস্ব হয়ে কবুতর পালন ছেড়েই দিয়েছেন। কিন্তু তাতে ক্ষতি কার আমাদের সবারই। এই ধরনের লোকরা নিজেদের অনেক জ্ঞানী মনে করেন। আর অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে না জানে অনর্থক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রোগের লক্ষণ না জেনেই। এরা এদের কাজ কে অনেক পুণ্য করছে বলে মনে করে থাকেন। আসলেই কি তাই?
আল্লাহ্ বলেন, “শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলী সুশোভিত করে দিয়েছে। অতঃপর তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতএব তারা সৎপথ পায় না।“(সূরা নমলঃআয়াত-২৪)
অনেকেই হয়ত ইতিমধ্যেই ভাবতে শুরু করেছেন কেন এ সব কথা বলছি? এর কারন আজ এক খামারির দুঃখ দূরদর্শার কথা শুনে ও ছবি দেখে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। এই খামারি কে প্রথমে একজন ডিপথেরিয়ার চিকিৎসা দিয়েছিলেন। পরে ভাল না হওয়ায় উক্ত খামারি ভেটেনারি ডাক্তারের কাছে গেলেন যার ডিগ্রির শেষ নাই। তিনি আবার আগে কিউরেটর ছিলেন এক জু’তে, (তাই ভাবলাম এ জন্যই আমাদের এই জু এর এই অবস্থা।) যাইহোক, তিনি তাকে অনেক গুলো অ্যান্টিবায়োটিক দিলেন সাথে কিছু ভিটামিন। এতেও কোন কাজ হলনা। সব কবুতর গুলো মারা গেল। সেগুলো টেস্ট করার পর তিনি মতামত দিলেন যে এগুলোর রানিখেত হয়েছে। যাই হোক ডাক্তার বলে কথা। আমার মনে হচ্ছিল তাকে কল করে কিছু কথা বলি, কিন্তু ভাবলাম এখন যদি আমি বলতে যাই উনি বলবেন, আপনার কি ডিগ্রি আছে? আমি জানেন ডিগ্রি ধারি। কিন্তু ডিগ্রিধারী বলে এর এ রকম অপব্যাবহার করবে? কিছু বলার নাই। এদের জন্য ভাল হবার, ও সঠিক জ্ঞান অর্জন করার দোয়া করা ছাড়া। আর যারা আছেন উনাদের কোথাই উঠেন ও বসেন তাদের জন্য দোয়া করতে হবে। আল্লাহ যেন তাদের বুঝদার বানিয়ে দেন।
আল্লাহ্ আরও বলেন,” শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়।“(সূরা ফাতিরঃআয়াত-৬)
এদের ব্যাপারে বলে শেষ করা যাবে না, যতই চেষ্টা করা হোক না কেন। এরা সুধরাবে না। এখন এদের ভাল হবার জন্য দোয়া করা ছাড়া আমাদের এই সেক্টর কে বাচান খুবই কঠিন হবে। আর যদি তাই হয় তাহলে আমারও এর দায়িত্ব আমাদের ঘারেও এসে পরে এটাকে আমরা সহজে এড়িয়ে যেতে পারব না।
আল্লাহ্ বলেন,
“এরা যে রয়েছে, এরাই হলে শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না। আর তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তবে আমাকে ভয় কর।“(সূরা আল ইমরানঃআয়াত১৭৫)
পরিশেষে, আমারা সবাই সবার জন্য দোয়া করি,কারন আমাদের আত্মা অপবিত্র হয়ে গেছে কোন ঔষধে বা উপদেশে এটার কাজ হবে না দোয়া ছাড়া।
আল্লাহ্ বলেন,”আর তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।“(সূরা আন নিসাঃআয়াত-৮৬)
“যখন তাদেরকে বোঝানো হয়, তখন তারা বোঝে না।“ সূরা আস-সাফফাতঃআয়াত-১৩
মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই
ভুল সবই ভুল (কবুতরের কেস স্টাডি) সপ্তম পর্ব BD Online Pigeon Market

Pigeon Discussion, Pigeon Diseases & treatment
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন