শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪

বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কবুতরের বিভিন্ন রোগের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ (Pigeon Medicine) বিক্রয় করা হবে।

বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কবুতরের বিভিন্ন রোগের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ (Pigeon Medicine) বিক্রয় করা হবে। আগ্রহী কবুতর পালক,খামারি ও ফেন্সিয়াররা যোগাযোগ করুন, মোবাইল# ০১৮১৯৮১৬৩৯৩। (মজুত সীমিত।)


1) Coccicure: কবুতরের coccidiosis প্রতিরোধ ও চিকিত্সায় ভাল কার্যকরী ঔষধ।


2) Streptococ-coli-cure : কবুতরের Streptococcus bovis (তরুণ কবুতরের অসুস্থতা) ও ই-কোলাই দ্বারা সৃষ্ট রোগ ও তার প্রতিকারের জন্য ব্যবহৃত হয়।


3) Trichomonas Cure: Trichomoniasis (Cankar) এবং Hexamitiasis রোগের প্রতিরোধ ও

চিকিত্সায় ভাল কাজ কএ থাকে।


4) Paratyphoid cure: salmonellosis (প্যারাটাইফয়েড) এর জন্য কার্যকরী।


5) Wormacure: কবুতরের বিভিন্ন ধরনের ক্রিমির জন্য কার্যকরী।


6) Total Disinfection Combination: occidiosis,trichomoniasis(cankar),salmonella (টাইফয়েড-

সদৃশ জ্বর), ornithosis(one eye coldness) জন্য প্রতিকারের জন্য কার্যকরী ।


7) OrniSpecial: ornithosis(one eye coldness) জন্য প্রতিকারের জন্য কার্যকরী


8) BS: canker (tricho), coccidiosis, hexamitiasis এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়াল

সংক্রমন থেকে প্রতিকার করে, হজমের সমস্যা ও হজম শক্তি বাড়াতে

ও অতিরিক্ত পালক ঝরা রোগ থেকে প্রতিকার করে থাকে।


9) Belgawormac: কবুতরের বিভিন্ন ধরনের ক্রিমির জন্য কার্যকরী।


13) 10% ENROFLOXAROM ঃব্রড স্পেকট্রাম antimicrobial, Mycoplasmosis, salmonellosis,

pasteurelosis চিকিত্সার জন্য ও সংক্রামক coryza ব্যাকটেরিয়া, মাইকোপ্লাজ়মা এবং chlamidia

দ্বারা উত্পাদিত রোগের চিকিৎসায় কার্যকরী।


14) Alazol: trichomoniasis (cankar) চিকিৎসায় ও প্রতিরোধে ভাল কাজ করে থাকে।


17) Belgaroni 10%: trichomoniasis (cankar) ক্ষেত্রে প্রিভেন্টিভ এবং চিকিত্সা রোগ নিরাময়কারী।


18) Chevi-Col: Trichomoniasis (cankar) এবং Hexamitiasis প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় কার্যকারী।


19) OrniSpecial: Ornithosis (one eye coldness) , ময়লা নাক,কঠিন শ্বাস (ঝিমুনি ভাব), চোখের পাতা ফোলা, ইত্যাদি চিকিৎসায় কার্যকরী।


20) Nirfuramycin: salmonellosis (Paratyphus) বিরুদ্ধে ভাল চিকিত্সা। এছাড়াও যেকোনো ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, কোলাই সংক্রমণে , শ্বাসযন্ত্র ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, বা স্ট্রেস এ ভাল কাজ করে থাকে।


21) Superboli: একটি আদর্শ ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের । কবুতরের রেসের পর এই ভিটামিন বিশেষ ভাবে কার্যকরী।



বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কবুতরের বিভিন্ন রোগের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ (Pigeon Medicine) বিক্রয় করা হবে। BD Online Pigeon Market

বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কবুতরের বিভিন্ন রোগের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ (Pigeon Medicine) বিক্রয় করা হবে।

শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪

কবুতর খামারিদের জন্য শীতের মাসিক ছক

কবুতর খামারিদের জন্য শীতের মাসিক ছক


“তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর।“ (সূরা আল আ’রাফঃআয়াত-১৭৯)


আমাদের জীবনে অহরহ অনেক ঘটনা ঘটছে বা অনেক কিছুই আমরা জানতে পারছি পড়া,দেখা বা শুনার মাধ্যমে। যেটা আমাদের মন বিশ্বাস করে না বা সায় দেই না সেগুলোকে আমরা অন্য কারো সাথে আলোচনা করা বা জানানোর প্রয়োজন মনে করি না। কিন্তু যে সব ঘটনা আমরা অন্যের সাথে আলোচনা করি বা জানানোর জন্য ব্যাতিব্যাস্ত থাকি। যদিও বা আমারা মুখে বলে থাকি এগুলো আমি বিশ্বাস করি না বা এগুলো ভুয়া। যেভাবেই বলি না কেন একবার একটু চিন্তা করে দেখেন এগুলোর ব্যাপারে মনের এক কনাই কোথাও যেন এর কিছুটা হলেও বিশ্বাস লুকিয়ে আছে বা এই কথার স্বপক্ষে কোন যুক্তি আপনার মনে আছে। একথার বাস্তবতা বা কেস স্টাডি হল এরূপ, অনেকেই আছেন যারা বলে থাকেন ভাই আমাকে উনি এই ঔষধ দিয়েছেন এটা কি ভাল হবে? বা ভাই আমি উনাকে এই ধরনের ঔষধ দিতে দেখেছি। বা উনাকে এই ঔষধ প্রয়োগ করে উপকার পেতে দেখেছি, আপনি কি বলেন। এভাবে কারো কাছে উপদেশ চাওয়া হয়। বা বলা হয় ভাই উনি আপনার সম্পর্কে এটা বলেন বা বলেছেন। এর মানে আপনি এই কথা স্বপক্ষে আপনার মনে একটু হলেও সমর্থন আছে বা এই কথা আপনি একটু হলেও বিশ্বাস করেন। অনেকেই বলে যা রটে তা কিছু না কিছু বটে। অনেক সময় কিছু না রটলেই আমরা বিশ্বাস করে নেই এটা কিছু বটে। যেমন ভ্যাকসিন এর কোথাই বলি, আমাদের দেশে হাঁস মুরগির ভ্যাকসিন মানুষ দিতেছে অবলীলাই জিজ্ঞাস করলে বলেন, ভাই মানসিক সান্তনা। ভাই অহেতুক মানসিক সান্তনা কেন দিবেন? অনেকেই আছেন যারা এই ধরনের মানসিক সান্তনা লাভ করারা সাথে সাথে অহেতুক এই মানসিক সান্তনা তা অন্যকে দিতেও উৎসাহিত করেন। ব্যাপারটা অনেক টা এ রকম,”o foxes cut your tails because it is ugly….!” কিন্তু অন্যের লেজ কাটার ব্যাপারে উনারা কেন আগ্রহী তা বোধগম্য হয় না।



এখন ডিজিটাল যুগ এই যুগে একটা বোতামের চাপে অনেক কিছুই জানা যায়। আর এই যুগেও যদি আমরা বলি ভাই আমি জানিও না বা আমি তো নতুন এটা বলে। সেই তেমনি মানসিক সান্তনাই পাবেন আর কিছু না। আর এটা বলে আপনি আপনার দায়িত্ব থেকে পালাতে পারবেন না। পরকালে যদি আপনি বলেন যে হুজুর রা আমাদেরকে এটা জানানি তাহলেও কিন্তু আপনি মাফ পাবেন না। আপনার নিজের দায়িত্ব হল জ্ঞান অর্জন করা আর আপনি সেই ফরজ তরখ করেছেন। সেই জন্য এ ক্ষেত্রে আপনার দুই ধরনের শাস্তি হতে পারে পরকালে। এক, না জানা বা জানার চেষ্টা না করা এবং দুই, পালন না করার।


যাই হোক, শীত প্রায় সমাগত, তাই অনেকের মনে কবুতর নিয়ে আজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে শীতে অনেক কবুতর মারা যায়। আসলে তা সঠিক না। আপনি যদি আপনার কবুতরের সঠিক পরিচর্যা না করেন তাহলে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব ঋতুতেই আপনার কবুতর মারা যাবে। আর আপনি যদি সঠিক পরিচর্যা করেন বা অলসতা না করেন। তাহলেই কেবল আপনি সফল খামারি হিসাবে পরিগণিত হবেন সন্দেহ নাই।


শীতের মাসিকঃ


দিন ১-৪ঃ পর্যন্ত সাল্মনিল্লা কোর্স করাতে হবে। (যেটা বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে করে থাকে, কিন্তু সবচেয়ে উপযুক্ত সাফি+ফেবনিল+মারবেলাস এর মিক্স কোর্স করা, অনুপাত তা এরূপ ২+২+১ টেবিল চামচ ।)


দিন ৫ঃ স্যালাইন দিন। (অথবা এর বদলে ভিটামিন সি দিতে পারেন যেমন লেবুর রস। ১ টি লেবু ১ লিটার পানিতে।)


দিন ৬-৯ঃ পর্যন্ত ভিটামিন বি কমপ্লেক্স দিন। (এক্ষেত্রে toxynil, biovit, vita B+C ইত্যাদি ভিটামিন দিতে পারেন। কারন এর অভাবে বেশীর ভাগ টাল রোগ হয়।)


দিন ৯-১০ঃ পর্যন্ত হমিও Kali Curb 30 দিন। (এটা ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা থেকে প্রতিরোধ করবে।)




দিন ১১ঃ
রসুন বাটা+মধু+লেবুর রস। (১ লিটার পানিতে ২ চা চামচ রসুন বাতা,২ চা চামচ মধু আর ১ চামচ লেবুর রস মিক্স করে দিলে ভাল।তবে পানি অবশ্য ছেকে নিতে হবে। আর লেবু চিপার সময় গ্লভস বা লেমন ইস্কুইজার ব্যাবহার করবেন। এটা শরীর গরম রাখতে সাহায্য করবে।তবে খেয়াল রাখতে হবে যে এই কোর্স করার আগে কবুতরের ক্রিমির ঔষধ দিয়া আছে কিনা টা জেনে নিবেন। কারন ক্রিমি থাকলে এটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।)


দিন ১২ঃ হোমিও Belodona 30 (এটা আপনার কবুতর কে প্যারামক্সি ভায়রাস থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে।)


দিন ১৩-১৬ঃ পর্যন্ত ক্যাল ডি,ভিটামিন K ও E ভিটামিন দিয়া ভাল। (এক্ষেত্রে Calcium Forte+AD3e+k Vitঅথবা Calbo D+Ad3e+k Vitদিয়া যেতে পারে। এতে শরীর গরম রাখতে সাহায্য করবেও ভিটামিন কে ডিমের ভিতর কবুতরের বাচ্চা মারা যাওয়া ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। এগুলো আলাদাভাবে বা একসঙ্গেও দিতে পারেন। তবে ভিটামিন K টা আলাদা ভাবে দেবার চেষ্টা করবেন।)




দিন ১৭ঃ
স্যালাইন দিন। (অথবা এর বদলে ভিটামিন সি দিতে পারেন যেমন লেবুর রস। ১ টি লেবু ১ লিটার পানিতে।)


দিন ১৮-২১ঃ পর্যন্ত লিভার টনিক দিন। (অধিকাংশ কবুতর লিভার জনিত সমস্যায় বেশি ভুগে থাকে। তাই লিভার এর ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে হামদারদ এর Cinkara, Icturn, Karmina ইত্যাদি বা আপনার পছন্দ মতো ব্যাবহার করতে পারেন।)


দিন ২২ঃ হোমিও Tiberculinum 30 দিন।(এটি ধুলা জনিত সমস্যা থেকে প্রতিরোধ করবে।)




দিন ২৩ঃ
লিকার চা বা গ্রিন চা বা প্রবায়টীক দিতে পারেন। ( এটা কাঙ্কার প্রতিরোধ ও ভাল ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনে সাহায্য করবে।)


দিন ২৪ঃ হোমিও Borax 30 দিন। (এটি বায়ু বাহিত রোগ থেকে প্রতিরোধ করবে।)

দিন ২৫ তারিখ অ্যাপেল সিডার দিন। (এক্ষেত্রে আমিরিকার তৈরি অ্যাপেল সিডার দিয়া উত্তম। এটা সাল্মনিল্লা প্রতিরোধে সাহায্য করবে।১ লিটারে ১ সিসি বা তার কম, বেশি প্রয়োগ করবেন না তাতে বিপরিত ফল হতে পারে।)


দিন ২৬-৩০ঃ পর্যন্ত মাল্টি ভিটামিন দিয়া ভাল। (এক্ষেত্রে pawer max(made in Vietnam),All Vit Ma(Made in Germany),Max grower (made in Holland) দিয়া যেতে পারে। এতে শরীর গরম রাখতে সাহায্য করবে। সকল ভিটামিন ও মিনারেলস এর অভাব পুরন করবে।)


দিন ৩১ঃ স্যালাইন দিন। (অথবা এর বদলে ভিটামিন সি দিতে পারেন যেমন লেবুর রস। ১ টি লেবু ১ লিটার পানিতে।অথবা সাধারন পানিও দিতে পারেন।)


প্রতিরোধক কিছু জরুরি ঔষধঃ


১) হোমিও deptherinum 200 ১ ফোঁটা করে মাসে বা ক্যালিমুর ৬ক্স ১ টা ট্যাবলেট মাসে দিতে পারেন। এতে ডিপথেরিয়া হবার সভাবনা অনেকটা কম থাকবে বা এর প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করবে।


২) হোমিও Eupatorium Perfo. ১ সিসি= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (মাসে ১ বার)।


(সতর্কতাঃ ২ ধরনের হোমিও ঔষধ একসঙ্গে ব্যাবহার করবেন না অনুগ্রহ করে।)


এই ছক যে আপনাকে অনুসরন করতেই হবে এমন কন বাধ্যবাধকতা নাই, এটা আপনার পছন্দ অনুযায়ী পরিবত্তন করে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন অসুস্থ কবুতর কে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ছাড়া অন্য কোন ভিটামিন দিবেন না। এটা তার ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর অনেকে বয়লার গ্রয়ার বা এই ধরনের খাবার দিতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে অসুস্থ কবুতরকে এই ধরনের খাবার দিয়া ঠিক না।একটা কথা খুব ভাল করে খেয়াল রাখতে হবে শীতে ক্রিমির ঔষধ ৪৫ দিন পর পর দিতে হবে, যদিও ছকে এটা উল্লেখ করা হয়নি। একটা জিনিষ আপনি খেয়াল রাখবেন সব সময় উপরের ছক একটা দিক নির্দেশনা মাত্র, এটা অত্যাবশ্যকীয় কিছুই না সাল্মনেল্লা,লিভার টনিক, বি কমপ্লেক্স, মাল্টি ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম ছাড়া। আপনি যদি এই কয়টা করেন ঠিক মত আপনার আর কোন কিছু না করলেও চলবে। ব্যাপারটা অনেক টা এ রকম যে ঘর যত সুন্দর করে সাজাতে পারেন ততই দেখতে ভাল লাগবে আপনার। অনুরূপ ভ্যাকসিন এর ব্যাপারেও, অনেকে মনে করেন ভ্যাকসিনই সকল সমস্যার সমাধান। কিন্তু আসলে এটা ঠিক না। আপনি যদি ভ্যাকসিন দিতে চান তবে কবুতরের জন্য যে ভ্যাকসিন সেগুলো দিবেন। হাঁস বা মুরগির ভ্যাকসিন দিবেন না অনুগ্রহ করে। আতে আপনার কোন কাজে আসবেই না, বরং এতে আপনার কবুতরের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।


“আর তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।“(সূরা আন নিসাঃআয়াত-৮৬)


লেখক : সোহেল রাবি ভাই



কবুতর খামারিদের জন্য শীতের মাসিক ছক BD Online Pigeon Market

কবুতর খামারিদের জন্য শীতের মাসিক ছক

Pigeon Discussion, Pigeon Diseases & treatment

বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৪

ভুল সবই ভুল (কবুতর এর কি রানিখেত হয়?) কেস স্টাডি পর্ব-৮

“মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক তর্কপ্রিয়।“( সূরা কাহফঃআয়াত-৫৪)


ছোট বেলায় একবার পাখি শিকার করতে গিয়ে ভয় পেয়েছিলাম আমি সহ আমার আরও ৩ সহপাঠী আর এর পর থেকেই আমার জ্বর আসত, অনেক তেল পড়া পানি পড়া ইত্যাদি দিয়ার পর বা যেকারনেই হোক ভাল হলাম। একসময় আমার বাবা এক ভণ্ড পীর কে দিয়ে আমাকে দোয়া করানো হল তিনি আমাকে দেখে বললেন যে ওর উপর পরীর ছায়া আছে। মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গেল, এক অজানা আশঙ্কায় ভয়ে কেপে কেপে উঠতাম আবার মনের মধ্যে গভীর এক বাসনাও জেগে উঠত পরী বলে কথা, যাই হোক সময় বাড়ার সাথে সাথে এই ব্যাপারটা নিয়ে বুঝলাম ও হাসলাম। আসলে এগুলো সবই আজগুবি কথা বাস্তবে এ গুলো হয় না। আর আমাদের দেশে পীর, ফকির, ওঝা, হস্তবিশারদ ইত্যাদি লোকদের উপর এখনও মানুষের অগাধ বিশ্বাস। এদের কাছে কেউ কোন রোগী নিয়ে গেলেই প্রথমে যে কথা গুলো বলে তা হল, ওকে তো জিনে ধরেছে ওর উপর তো কালির আসর আছে, ওর উপর তো শনির দৃষ্টি পড়েছে বা ওর সামনে একটা বিপদ আছে বা ওর সামনে একটা দুর্ঘটনা হবার সম্ভাবনা আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে তারা জানে না যে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আর মানুষের ক্ষমতার উপর আল্লাহ্‌ ছাড়া কারো ক্ষমতা খাটবে না যদি ষে নির্দিষ্ট সিমার মধ্যে থাকে। আর অদৃষ্ট এর কথা আল্লাহ্‌ ছাড়া কেউ জানেন না। এমন কি ফেরেশতারাও জানে না। কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ দাবি করে। এখন তাহলে তাদের কোন পর্যায়ে ফেলা যাই তার বিচার আপনাদের উপর।



আমাদের কবুতর সেক্টরে এমনি কিছু পীর ফকির এখনও আছে যাদের আমরা পশু চিকিৎসক বলি তারা ঠিক এমনি ভাবে এখনও আজগুবি জ্ঞান বহির্ভূত চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আমাদের দেশে প্রাণী সেক্টরের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা এখন বিংশ শতাব্দীতে আর এটাকে ডিজিটাল যুগ বলে আমরা চাইলেই একটা বোতামের চাপে বিশ্বের অনেক কিছুই অনায়াসে জানতে পারি। অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারি কিন্তু আমরা তা করি না। আমরা পুরানো ভুল টাকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে পছন্দ করি। নিজেদের কে যুগের সাথে আপডেট হতে পছন্দ করি না শুধু মাত্র স্টাইল ছাড়া। আমাদের ডিজিটাল যুগে ওয়েব গুলোতে একদিকে যেমন সঠিক তথ্য থাকে তেমন মুখরোচক ভুল তথ্যও থাকে আপনাকে আপনার জ্ঞান ও বিচার বিবেচনা ও নানা সাইট ঘেঁটে বেছে বের করতে হবে সঠিক তথ্যটি, আর আপনি যদি না পারেন তাহলে আপনি অপারগ। আর আমাদের এই অপারগতা আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। যার ছায়া আমাদের প্রাণী বিশেষ করে কবুতর সেক্টরে পড়েছে। আমাদের দেশে ভেটেনারি ডাক্তাররা পোলট্রি চিকিৎসা ব্যাবস্থা এই সব ফান্স্যি দামী কবুতরের উপর প্রয়োগ করে হাত জস করেন। চিকিৎসা যদি কাজে লাগে ভাল না হলে ভাই এটা রানিখেত হয়েছিল ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের দেশে ৯৫% খামারিই জানেন না যে কবুতরের রানিখেত হয় না। আমার এই কথা শুনে হয়ত অনেকেরই ভুরু কুচকে যাবে, হাঁ কুচকে যাবারি কথা। একটু যদি আলোচনা করি জিনিসটা আপনাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।


১) আমরা অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেনিতে জীব বিজ্ঞানে পড়েছিলাম রানিখেত নিয়ে যেটা শুধু হাঁস মুরগির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।


২) মেডিক্যাল অভিধানে আছে, নিউক্যাসল রোগ = (ভেটেরিনারী বিজ্ঞান) কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউমোনিয়া এবং প্রদাহ দ্বারা চিহ্নিত পাখির একটি তীব্র ভাইরাল রোগ, বিশেষ করে পোলট্রির জন্য।


৩) রানিক্ষেত রোগের প্রতিশব্দ হল নিউক্যাসেল রোগ। যদিও নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগের ডি,এন,এ গত পার্থক্য আছে।


৪) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগে আক্রান্ত হলে কোন চিকিৎসা নাই। যদিও আমাদের দেশের নান জনে নান ধরনের চিকিৎসার চেষ্টা করেন।


৫) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগ এ ৯০% মৃত্যুহার আর ১০% মৃত্যুপ্রায় অবস্থাই থাকে।


৬) যেহেতু এটা একটা ভাইরাল সংক্রমিত রোগ তাই এটি কোন প্রকার অ্যান্টিবায়টিক বা ঔষধে কাজ করে না।


৭) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগ প্যারামক্সি ভাইরাস গ্রুপ (PMV1) এর অন্তভুক্ত। এই ২ টি রোগের ভাইরাস অনেক প্রকার হয়ে থাকে যার মধ্যে MMV1-PMV9 প্রধান।


৮) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগ একটি অতি সংবেদনশিল সংক্রমিত রোগ।


৯) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগে নিমিষের মধ্যে পুরো খামার আক্রান্ত হয়ে

যায় ও পপ্রাণী মারা যায়। অনেকটা বার্ড ফ্লু এর মত।


১০) কবুতরের মধ্যে প্যারামক্সি(PMV) রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে দেখা যাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, কিন্তু আমাদের দেশে এ পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাব এখনও দেখা যায়নি, কিন্তু তারপরও কিছু জ্ঞানহীন লোকের কাণ্ডজ্ঞানহীন কার্যকারিতার কারনে আমাদের দেশকে প্রাণীদের রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। আর ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের দেশ থেকে কোন প্রাণী রপ্তানি করতে পারছি না।


১১) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগের জন্য নানা ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যাই যা শুধুই পোলট্রির জন্য প্রযোজ্য এগুলো কবুতরের ক্ষেত্রে কোন কজে লাগে না। যদিও বিপণন নীতির কারনে এই ভ্যাকসিন কে কবুতরের জন্য প্রযোজ্য বলে চালান হয় আসলে তা ঠিক না। বিশ্বের কোন দেশেই কবুতরের জন্য এই ভ্যাকসিন ব্যাবহার করতে দেখা যায় না বা শুনাও যায়না। তারপরও আমাদের দেশে ৬০% খামারি এই পোলট্রি ভ্যাকসিন ব্যাবহার করে থাকেন।


১২) অনেকেই ডিপথেরিয়া রোগ কে রানিখেত বলে ভুল করে থাকে। কারণ ডিপথেরিয়ার লক্ষন সব গুলোই রানিক্ষেত রোগের সঙ্গে মিলে যাই। যদিও অনেকেই মনে করেন যে কবুতরের ডিপথেরিয়া হয় না আসলে তা সঠিক না। আবার অনেকেই সাল্মনিল্লা কে রানিক্ষেত বলে থাকেন যার কোন ভিত্তি নাই।


১৩) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগের পোলট্রি প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আমাদের দেশে পাওয়া যায়, কিন্তু কবুতরের প্যারামক্সি ভাইরাস এর প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আমাদের দেশে কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমদানি না করলে পাওয়া যাই না।


১৪) আমাদের দেশে যদিও কবুতরের প্যারামক্সি ভাইরাস এর জীবাণু নাই তারপরও যদি সুযোগ থাকে তাহলে বছরে ১ বার অন্তত এই ভ্যাকসিন দিলে রাখলে ভাল, কারণ যে হারে কবুতর আমদানি হচ্ছে তাতে অচিরেই এই ভাইরাস বাংলাদেশে আবির্ভাব হলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না।


পরিশেষে, সবারই কাছে বিশেষ ভাবে অনুরধ যেন যেকোনো কিছুরই সঠিক ভাবে বিচার বিবেচনা করেই কেবল মন্তব্য করবেন। আমরা যা জানি না সঠিক ভাবে সেগুলো নিয়ে আরও পড়াশুনা করব। আরও বেশী করে যাব তাহলেই কেবল অনাখাংকিত পরিস্থিতি থেকে বেচে থাকতে পারব।



ভুল সবই ভুল (কবুতর এর কি রানিখেত হয়?) কেস স্টাডি পর্ব-৮ BD Online Pigeon Market

ভুল সবই ভুল (কবুতর এর কি রানিখেত হয়?) কেস স্টাডি পর্ব-৮

Pigeon Discussion, Pigeon Diseases & treatment

শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৪

কবুতরের ম্যালেরিয়া রোগ (Pigeon Malaria)

কবুতরের ম্যালেরিয়া রোগ (Pigeon Malaria)


“তুমি মনে করো না, যারা নিজেদের কৃতকর্মের উপর আনন্দিত হয় এবং না করা বিষয়ের জন্য প্রশংসা কামনা করে, তারা আমার নিকট থেকে অব্যাহতি লাভ করেছে। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।“(সূরা আল ইমরানঃআয়াত-১৮৮)


আমি, কবুতরের রোগব্যাধি সম্পর্কিত যা আছে তা সকল খামারিদের মধ্যে শেয়ার করতে সব সময় চেষ্টা করেছি ও করছি অনবরত। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু জিনিস মানসিক পীড়া দেয় প্রচণ্ড, যখন আমার এই কষ্ট সাধ্য লিখা অনায়াসে নিজের নামে কপি করে চালাই কতিপয় কিছু লোক, তাই এই ব্যাপারে আমি আর লিখি নাই, শুধুমাত্র কেস স্টাডি আকরে রোগের ও কার্যক্রমের কিছু ইঙ্গিত দিবার চেষ্টা করেছি। কিছুদিন মনের সাথে লড়াই করে। আল্লাহ্‌র এই আয়াতটি মনে পরে গেল। আসলেই তো আমি কেন চিন্তা করি এসবের ? সকল প্রশংসা ও তারিফ তো শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ তায়ালার আমি তো উসিলা মাত্র। তাই দ্বিতীয় কোন চিন্তা না করেই আল্লাহ্‌র উপর সমস্থ কিছু ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে আজ এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট টা লিখলাম, আশা করি খামারিরা এতে উপকৃত হবেন।



একবার বাংলাদেশে জাতিসংঘ থেকে একদল পরিদর্শক দল আসল এ দেশের এক বিশেষ জরিপের জন্য, পরে তারা বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ পরিদর্শন করল। সেখানের ছাত্রদের এক এক করে জিজ্ঞাস করল তুমি কি হতে চাও? কেউ বলল ডাক্তার কেউ ইঞ্জিনিয়ার কেউ পাইলট ইত্যাদি। পরে তারা জরিপ শেষে তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিল যে, তোমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, একজন ছেলেও পেলাম না যে সে, কৃষক হতে চাই। এটা তোমাদের জন্য খুবই বিপদজনক। এ রকম যদি কোন জরিপ করা হয় কবুতর সেক্টরে তাহলেও আমরা দেখব যে, আমাদের দেশে অধিকাংশ (৯০% প্রায়) খামারি কবুতর পালে শুধুমাত্র পালার জন্য, নামের জন্য বা ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য। কবুতর কে ভালবাসে বা শখের বসে কবুতর খামারি হয় শুধুমাত্র (১০% প্রায়)। আর সমস্যার সূত্রপাত এখানেই ! শুধু তাই নয় আমাদের দেশের খামারিরা কবুতরের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গাফেলতি করেন। কোন কবুতরের রোগ হলে মানে ঝিমাতে দেখেলেই খামারিদের করনীয় হল। সেটাকে ধরে ঠিকমত পরখ করা।


১) তার মুখের ভিতরে কফ আছে কিনা বা লালা ধরনের কিছু আছে কিনা?

২) সাদা সাদা বা হলদে ধরনের কিছু আছে কিনা?

৩) হাঁচি বা কাশি দেয় কিনা?

৪) হাঁ করে শ্বাস নেয় কিনা?

৫) সবুজ ও হালকা হলদে ধরনের পায়খানা করে কিনা?

৬) মুখে গন্ধ আছে কিনা? ইত্যাদি পরীক্ষা করা। কিন্তু সেটা না করেই বলেন কবুতর ঝুমাচ্ছে।


কোন প্রশ্ন করা হলে না দেখেই বলেন না এসব কিছু নাই। ঠিক ৩-৪ দিন পরই বলেন যে, এসব লক্ষণ আছে, এর মানে আপনি ইতিমধ্যে চিকিৎসা ব্যাবস্থা থেকে এই সময়টা পিছিয়ে গেলেন। আর যদি মারা যায় তাহলে নিজের দায়িত্ব এড়ানোর জন্য বলা হয়। যে তার হায়াত ছিল না বা চিকিৎসা ঠিকমত হয়নি বা যিনি ঔষধ দিয়েছেন তিনি ঠিকমত ঔষধ দিতে পারেননি ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলেই কি এ কথা বলে পার পাওয়া যাবে? আল্লাহ্‌ ভাল জানেন। তবে এ প্রসঙ্গে আবার সেই হাদিস টি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই।


রসূল(সঃ) বলেন, “একজন মুসলিম যিনি একটি পোষা প্রাণী রাখতে পছন্দ করে, তার দায়িত্ব হল ভালমত এর যত্ন নেয়া,যথাযথ খাদ্য, পানি এবং আশ্রয়ের ব্যাপারে খেয়াল করা আবশ্যক। কোন বাক্তি যদি একটি পোষা প্রাণীর যত্নর ব্যাপারে উপেক্ষিত হয় তার কঠিন শাস্তি বর্ণনা করেছেন।“


গত ঈদুল ফিতর এ একজন সামাজিক সাইট এ তার খামারে পাখিদের লম্বা সারি করা মৃত দেহগুলোর ছবি গর্ব ভরে দিয়ে কাহিনী লিখল, এ রকম যে সে গ্রামের বাড়িতে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে গেছিলো ৩ দিনের জন্য, আর তার খামারে সেই মত খাবার ও পানি রেখে গেছিলো। কিন্তু সে সাতদিন পর বাড়ি ফিরল! আর ফিরেই এই ঘটনা দেখল। সেই এই ঘটনা লিখে একটু সহানুভুতি পাবার একটা বৃথা চেষ্টা করেছিল মাত্র, আর অনেকেই কিছু না বুঝেই তাকে সান্তনা দিয়েছিল। আর তাতে সে হয়ত মনে মনে একটু খুশি হয়েছিল হয়ত। কিন্তু আমি তাকে কোন সান্তনার বানী শুনাতে পারিনি, এটা দেখে রাগে দুঃখে চোখে পানি চলে এসেছিল আমার, আর সেই অমানুষটাকে আমি আমার বন্ধু তালিকাতে আর রাখতে পারিনি। এ রকম এই ঈদেও অনেকেই খাবার ও পানি দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। কিন্তু তারা হয়ত ভুলে গেছেন এগুলো হল প্রাণী, তারা হিসাব করে খেতে ও পান করতে জানে না। কিন্তু কাকে শোনাব এ সব কথা। যাকে বলব তারাত জেগে ঘুমান দলের লোক!


এদের সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেন, “তারা কি এই উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণ করেনি, যাতে তারা সমঝদার হৃদয় ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারে? বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না, কিন্তু বক্ষ স্থিত অন্তরই অন্ধ হয়।“( সূরা হাজ্জ্বঃআয়াত-৪৬)


আল্লাহ্‌ তায়ালা আরও বলেন, ”আল্লাহ তাদের অন্তকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।“(সূরা আল বাক্বারাহঃআয়াত-৭)


রোগ বর্ণনাঃ


আমাদের খামারে কোন কবুতর যখনি অসুস্থ হয় তখনি আমরা কোন না কোন ঔষধ প্রয়োগ করি। কিছু ক্ষেত্রে হয়ত ঔষধ নির্বাচন সঠিক হয়। তাও সেগুলো বেশির ভাগই অনুমানের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা জানি না কোন রোগের জন্য আমরা এই ঔষধ প্রয়োগ করা হয়েছে। আর কোন রোগের জন্য কোন ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। আর কতদিন এই সব ঔষধ প্রয়োগ করতে হয় তা ৯৫% খামারিরাই জানেন না। এমনকি আমাদের দেশের অধিকাংশ পশু ডাক্তাররাও অনেক রোগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না বা এই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে কি ধরনের ঔষধ প্রয়োগ করা উচিৎ সে সম্পর্কে নিজেকে প্রস্তুত করতেও প্রস্তুত না উনারা। আর এর ফল ভোগ করেন নিরীহ খামারিরা। তাই আপনাকে আগে রোগের সঠিক ধরন তা জানতে হবে চিকিৎসা শুরু করার আগে। তাহলেই কেবল আপনার পরিশ্রম সার্থক হবে। না হলে সব কিছুই ভেস্তে যাবে কোন সন্দেহ নাই।


কবুতরের ম্যালেরিয়াঃ

================


Plasmodiosis বা ম্যালেরিয়া ধিরে ধিরে দৃশ্যমান হয়ে উঠা একটি অতি জঘন্য ধরনের প্রচলিত রোগ। যাকে তথাকথিত নদীর রোগও বলা হয়। এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময়ই কোন লক্ষণ প্রকাশ পাই না। কিন্তু একটু ভাল করে খেয়াল করলেই লক্ষণ গুলো ধরা পরে। এটি পোকামাকড় দ্বারা সৃষ্ট পৃথিবীতে প্রচুর পাখি ও কবুতরের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসাবে ধরা হয়।


কারনঃ

=====


১) এটি কবুতরের গায়ের রক্ত শোষক মাছি যার নাম জকি বলা হয় (যদিও অনেক পশু ডাক্তার মনে করেন সাধারন মাছি এই রোগের কারণ কিন্তু আসলে তা সঠিক না।) ও স্ত্রি মশা যাকে আনোফেলিস বলা হয়। এই দুটি প্রাথমিক বাহক হিসাবে কাজ করে থাকে। যা পরে অন্তর্বর্তী হোস্ট হিসাবে কাজ করে। যারা প্রটোজোয়ান নামক জীবাণু কবুতরের শরীরে অনুপ্রবেশ ঘটায়। যার ফলে এই জীবাণু কবুতরের লাল রক্ত কোষে আক্রমন করে এটিকে আস্তে আস্তে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে কবুতরে করুন মৃত্যু ঘটে।


২) বাইরের পাখি বা কবুতর এই রোগের বাহক হিসাবেও অনেক সময় কাজ করে থাকে।


৩) আক্রান্ত কবুতর বা পাখি থেকে অন্য কবুতরের মধ্যে সংক্রমিত হতে দেখা যায়।


৪) আক্রান্ত পাখি বা কবুতরের মল বা বিষ্ঠা থেকে এই রোগ সংক্রমিত হয়।


৫) মশা উৎপন্ন হয় যেখানে এ রকম আবহাওয়া বৈশিষ্ট্য স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের কারনেও হতে পারে।


লক্ষণঃ

====


১) মুখ হাঁ করে শ্বাস নিবে কিন্তু মুখের ভিতরে কোন কফ বা সাদা ধরনের কিছু থাকবে না। (যদিও অনেকেই এটাকে ডিপথেরিয়ার লক্ষণ বলেও ভুল করে থাকে।)


২) বুকের নিচে পাতলা হাড্ডির কাছে লোম শূন্য ও প্রচুর খুস্কি দেখা যাবে। (যদিও অনেক সময় সুস্থ কবুতর অনেক দিন গোসল না করার ফলেও এ ধরনের খুস্কি দেখা যেতে পারে।)


৩) পালকের উজ্জলতা বা মসৃণ বা তেলতেলে ভাবতা নষ্ট হয়ে যাবে।


৪) কবুতর কে ধরলেই সেটা সাদা সাদা ধরনের বমি করবে ও প্রচণ্ড হাঁপাবে। ও মুখের ভিতরে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ থাকবে যা অনেক সময় দূর থেকেই পাওয়া যায়। (যদিও ডিপথেরিয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের লক্ষণ দেখা যাই।) যদিও কিছু খেলেও বমি করার প্রবনতা থেক্তে পারে।


৫) ফ্যাঁকাসে ও সাদা ঠোঁট দেখা যাবে। (সুস্থ কবুতরের মত গোলাপি ধরনের ঠোঁট থাকবে না)


৬) কবুতরের মধ্যে উদ্যমতা থাকবে না উদাসীনতা প্রকাশ পাবে। অর্থাৎ হটাত করে চমকে উঠবে।


৭) গায়ের তাপমাত্রা বেশী হবে স্বাভাবিকের থেকেও ও একটানা জ্বর থাকবে গায়ে।


৮) রক্তাল্পতা প্রকাশ পাবে।


৯) কবুতর খুবই খুব দুর্বল হয়ে পড়বে অল্পদিনের মধেই ও টলে পড়ে যাবে।


১০) পায়খানার তেমন কোন বিশেষ লক্ষণ চোখে পড়বে না, তবে পাতলা হলুদ বা সাদা ও সবুজ মিক্স ধরনের থাকবে। অথবা সাদা জমাট আঠাল ধরনের হতে পারে।


১১) এই রোগ সাধারণত বাচ্চা অর্থাৎ ইয়ং কবুতর ও ডিম পাড়া মাদী কবুতর বেশী এক্রান্ত হতে দেখা যায়।


১২) পাখা ঝুলে যাবে ও লেজ নেমে থাকবে।


১৩) এই রোগে কবুতরের লিভার অনেক বড় হয়ে যাই, আর রক্ত কোষের সংখ্যা কমে যাবার ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই কবুতরের মৃত্যু ঘটবে।




প্রতিরোধঃ

=======


যেহেতু এই রোগে একবার আক্রান্ত হলে সেই কবুতর ম্যালেরিয়ার জীবাণু আজীবন বহন করে। তাই এই রোগের প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ করাটাই ভাল।


১) আপনার খামারে যেন পানি না জমে বা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেখানে মশা ডিম উৎপাদন করতে না পারে।


২) বাইরের পাখি বা কবুতর যে খামারে প্রবেশের সুযোগ না পায় তার যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে হবে।


৩) কবুতরের গায়ে যেন মাছি না জন্মে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে, এ জন্য তাদের গোসল করার ব্যাবস্থা করা বা নিজে ধরে গোসল করাতে হবে।


৪) অন্য কবুতরের সঙ্গে মিশলে সেই কবুতর গুলোকে ভাল করে ধুলো মুক্ত করা বা জীবাণু মুক্ত করা। যাতে খামারে জীবাণু প্রবেশ না করে।


৫) নিয়মিত জীবাণু মুক্ত স্প্রে করা।


৬) খামার নিয়মিত পরিস্কার পরিছন্ন রাখা।


৭) হোমিও Eupatorium perfo 30 ১ সিসি ১ লিটার পানিতে মিক্স করে মাসে একবার করে দিলে প্রতিরোধের জন্য ভাল উপকার পাওয়া যায়।


৮) রসুন পানি মাসে একবার অন্তত পরিবেশন করুন। ২ চামচ রসুন বাঁটা ১ কাপ পানিতে মিক্স করে ছেকে ১ লিটার পানিতে মিক্স করে দিন।


৯) অ্যাপেল সিডার মাসে অন্তত একবার পরিবেশন করুন ১ সিসি ১ লিটার পানিতে।




প্রতিকার/ চিকিৎসাঃ

===============


১) এই রোগের চিকিৎসা একটু ধৈর্যশীলতা পরিচয় দিতে হয়। কারণ রোগ চিকিৎসা ৫২ দিন পর্যন্ত চালাতে হয় লাল রক্ত কোষ গুলো আবার আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে।


২) রোগ ভাল হবার পরও সপ্তাহে বা মাসে ১-২ দিন এই চিকিৎসা চালাতে হতে পারে।


৩) আয়রন ও জিঙ্ক ভিটামিন দিতে হবে যাতে লাল রক্ত কোষ বাড়তে সাহায্য হয়।


৪) ১/৪ ভাগ AVLOQUIN (Chloroquine phosphate) + ১/৪ ভাগ JASOPRIM (primaquine) + ১ গ্রাম গ্লুকোজ+ ১ স্যালাইন =১০ সিসি পানিতে মিক্স করে দিনে ৩ বার করে দিতে হবে।


৫) চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে যেন কোন ভিটামিন ও মিনারেলস বাদ না পরে যথাবিধি সেগুলোকে প্রয়োগ করতে হবে।


৬) তবে সব থেকে কার্যকরী ঔষধ হল ARALEN WS Tablet (imported) প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।


ময়না তদন্তঃ যদি আপনি কবুতরে কে ব্যাবচ্ছেদ করেন তাহলে দেখবেন ওর লিভারের গায়ে অনেক ছোট ছোট কাল ফোঁটা ফোঁটার মত জমাট রক্তর মত হয়ে আছে ও হালকা কালচে বরন ধারন করেছে।


আর সর্বোপরি মনে রাখতে হবে যে, আপনি যদি রোগ নির্ণয়ে অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ সাহায্য নিতে হবে, বিশেষ করে এই রোগ নির্ণয় করা বেশ কঠিন; কারণ এই ম্যালেরিয়ার লক্ষণ অন্যান্য রোগের লক্ষণের অনুরূপ হয়।


“যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।“(সূরা আল যূমারঃআয়াত-১৮)


মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই



কবুতরের ম্যালেরিয়া রোগ (Pigeon Malaria) BD Online Pigeon Market

কবুতরের ম্যালেরিয়া রোগ (Pigeon Malaria)

Pigeon Diseases & treatment