“মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক তর্কপ্রিয়।“( সূরা কাহফঃআয়াত-৫৪)
ছোট বেলায় একবার পাখি শিকার করতে গিয়ে ভয় পেয়েছিলাম আমি সহ আমার আরও ৩ সহপাঠী আর এর পর থেকেই আমার জ্বর আসত, অনেক তেল পড়া পানি পড়া ইত্যাদি দিয়ার পর বা যেকারনেই হোক ভাল হলাম। একসময় আমার বাবা এক ভণ্ড পীর কে দিয়ে আমাকে দোয়া করানো হল তিনি আমাকে দেখে বললেন যে ওর উপর পরীর ছায়া আছে। মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গেল, এক অজানা আশঙ্কায় ভয়ে কেপে কেপে উঠতাম আবার মনের মধ্যে গভীর এক বাসনাও জেগে উঠত পরী বলে কথা, যাই হোক সময় বাড়ার সাথে সাথে এই ব্যাপারটা নিয়ে বুঝলাম ও হাসলাম। আসলে এগুলো সবই আজগুবি কথা বাস্তবে এ গুলো হয় না। আর আমাদের দেশে পীর, ফকির, ওঝা, হস্তবিশারদ ইত্যাদি লোকদের উপর এখনও মানুষের অগাধ বিশ্বাস। এদের কাছে কেউ কোন রোগী নিয়ে গেলেই প্রথমে যে কথা গুলো বলে তা হল, ওকে তো জিনে ধরেছে ওর উপর তো কালির আসর আছে, ওর উপর তো শনির দৃষ্টি পড়েছে বা ওর সামনে একটা বিপদ আছে বা ওর সামনে একটা দুর্ঘটনা হবার সম্ভাবনা আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে তারা জানে না যে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আর মানুষের ক্ষমতার উপর আল্লাহ্ ছাড়া কারো ক্ষমতা খাটবে না যদি ষে নির্দিষ্ট সিমার মধ্যে থাকে। আর অদৃষ্ট এর কথা আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানেন না। এমন কি ফেরেশতারাও জানে না। কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ দাবি করে। এখন তাহলে তাদের কোন পর্যায়ে ফেলা যাই তার বিচার আপনাদের উপর।
আমাদের কবুতর সেক্টরে এমনি কিছু পীর ফকির এখনও আছে যাদের আমরা পশু চিকিৎসক বলি তারা ঠিক এমনি ভাবে এখনও আজগুবি জ্ঞান বহির্ভূত চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আমাদের দেশে প্রাণী সেক্টরের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা এখন বিংশ শতাব্দীতে আর এটাকে ডিজিটাল যুগ বলে আমরা চাইলেই একটা বোতামের চাপে বিশ্বের অনেক কিছুই অনায়াসে জানতে পারি। অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারি কিন্তু আমরা তা করি না। আমরা পুরানো ভুল টাকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে পছন্দ করি। নিজেদের কে যুগের সাথে আপডেট হতে পছন্দ করি না শুধু মাত্র স্টাইল ছাড়া। আমাদের ডিজিটাল যুগে ওয়েব গুলোতে একদিকে যেমন সঠিক তথ্য থাকে তেমন মুখরোচক ভুল তথ্যও থাকে আপনাকে আপনার জ্ঞান ও বিচার বিবেচনা ও নানা সাইট ঘেঁটে বেছে বের করতে হবে সঠিক তথ্যটি, আর আপনি যদি না পারেন তাহলে আপনি অপারগ। আর আমাদের এই অপারগতা আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। যার ছায়া আমাদের প্রাণী বিশেষ করে কবুতর সেক্টরে পড়েছে। আমাদের দেশে ভেটেনারি ডাক্তাররা পোলট্রি চিকিৎসা ব্যাবস্থা এই সব ফান্স্যি দামী কবুতরের উপর প্রয়োগ করে হাত জস করেন। চিকিৎসা যদি কাজে লাগে ভাল না হলে ভাই এটা রানিখেত হয়েছিল ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের দেশে ৯৫% খামারিই জানেন না যে কবুতরের রানিখেত হয় না। আমার এই কথা শুনে হয়ত অনেকেরই ভুরু কুচকে যাবে, হাঁ কুচকে যাবারি কথা। একটু যদি আলোচনা করি জিনিসটা আপনাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।
১) আমরা অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেনিতে জীব বিজ্ঞানে পড়েছিলাম রানিখেত নিয়ে যেটা শুধু হাঁস মুরগির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
২) মেডিক্যাল অভিধানে আছে, নিউক্যাসল রোগ = (ভেটেরিনারী বিজ্ঞান) কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউমোনিয়া এবং প্রদাহ দ্বারা চিহ্নিত পাখির একটি তীব্র ভাইরাল রোগ, বিশেষ করে পোলট্রির জন্য।
৩) রানিক্ষেত রোগের প্রতিশব্দ হল নিউক্যাসেল রোগ। যদিও নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগের ডি,এন,এ গত পার্থক্য আছে।
৪) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগে আক্রান্ত হলে কোন চিকিৎসা নাই। যদিও আমাদের দেশের নান জনে নান ধরনের চিকিৎসার চেষ্টা করেন।
৫) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগ এ ৯০% মৃত্যুহার আর ১০% মৃত্যুপ্রায় অবস্থাই থাকে।
৬) যেহেতু এটা একটা ভাইরাল সংক্রমিত রোগ তাই এটি কোন প্রকার অ্যান্টিবায়টিক বা ঔষধে কাজ করে না।
৭) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগ প্যারামক্সি ভাইরাস গ্রুপ (PMV1) এর অন্তভুক্ত। এই ২ টি রোগের ভাইরাস অনেক প্রকার হয়ে থাকে যার মধ্যে MMV1-PMV9 প্রধান।
৮) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগ একটি অতি সংবেদনশিল সংক্রমিত রোগ।
৯) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগে নিমিষের মধ্যে পুরো খামার আক্রান্ত হয়ে
যায় ও পপ্রাণী মারা যায়। অনেকটা বার্ড ফ্লু এর মত।
১০) কবুতরের মধ্যে প্যারামক্সি(PMV) রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে দেখা যাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, কিন্তু আমাদের দেশে এ পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাব এখনও দেখা যায়নি, কিন্তু তারপরও কিছু জ্ঞানহীন লোকের কাণ্ডজ্ঞানহীন কার্যকারিতার কারনে আমাদের দেশকে প্রাণীদের রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। আর ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের দেশ থেকে কোন প্রাণী রপ্তানি করতে পারছি না।
১১) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগের জন্য নানা ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যাই যা শুধুই পোলট্রির জন্য প্রযোজ্য এগুলো কবুতরের ক্ষেত্রে কোন কজে লাগে না। যদিও বিপণন নীতির কারনে এই ভ্যাকসিন কে কবুতরের জন্য প্রযোজ্য বলে চালান হয় আসলে তা ঠিক না। বিশ্বের কোন দেশেই কবুতরের জন্য এই ভ্যাকসিন ব্যাবহার করতে দেখা যায় না বা শুনাও যায়না। তারপরও আমাদের দেশে ৬০% খামারি এই পোলট্রি ভ্যাকসিন ব্যাবহার করে থাকেন।
১২) অনেকেই ডিপথেরিয়া রোগ কে রানিখেত বলে ভুল করে থাকে। কারণ ডিপথেরিয়ার লক্ষন সব গুলোই রানিক্ষেত রোগের সঙ্গে মিলে যাই। যদিও অনেকেই মনে করেন যে কবুতরের ডিপথেরিয়া হয় না আসলে তা সঠিক না। আবার অনেকেই সাল্মনিল্লা কে রানিক্ষেত বলে থাকেন যার কোন ভিত্তি নাই।
১৩) নিউক্যাসল রোগ ও রানিক্ষেত রোগের পোলট্রি প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আমাদের দেশে পাওয়া যায়, কিন্তু কবুতরের প্যারামক্সি ভাইরাস এর প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আমাদের দেশে কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমদানি না করলে পাওয়া যাই না।
১৪) আমাদের দেশে যদিও কবুতরের প্যারামক্সি ভাইরাস এর জীবাণু নাই তারপরও যদি সুযোগ থাকে তাহলে বছরে ১ বার অন্তত এই ভ্যাকসিন দিলে রাখলে ভাল, কারণ যে হারে কবুতর আমদানি হচ্ছে তাতে অচিরেই এই ভাইরাস বাংলাদেশে আবির্ভাব হলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না।
পরিশেষে, সবারই কাছে বিশেষ ভাবে অনুরধ যেন যেকোনো কিছুরই সঠিক ভাবে বিচার বিবেচনা করেই কেবল মন্তব্য করবেন। আমরা যা জানি না সঠিক ভাবে সেগুলো নিয়ে আরও পড়াশুনা করব। আরও বেশী করে যাব তাহলেই কেবল অনাখাংকিত পরিস্থিতি থেকে বেচে থাকতে পারব।
ভুল সবই ভুল (কবুতর এর কি রানিখেত হয়?) কেস স্টাডি পর্ব-৮ BD Online Pigeon Market

Pigeon Discussion, Pigeon Diseases & treatment
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন