ভুল সবই ভুল (কবুতরের কেস স্টাডি ষষ্ঠ পর্ব)
“যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের ক্রটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মান জনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।“(সূরা আন নিসাঃআয়াত- ৩১)
শুক্রবারের ও ঈদের যে খুদবা শুনা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ওয়াজিব। যদিও খুদবা বলতে আমরা আরবি টাকেই প্রাধান্য দেই বেশী। কিন্তু যে জিনিষ আপনি বুঝতে পারছেন না সেটা থেকে, আপনি যেটা বুঝবেন সেটা শুনাই কি ভাল না আমাদের জন্য? আর সেটার জন্য আপনাকে একটু আগেভাগে যেতে হবে মসজিদে যাতে আপনি সেই বাংলা খুদবা টা ঠিকমত শুনতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে অশিকাংশ মানুষ শেষ মুহূর্তে মসজিদে প্রবেশ করেন, কোনমতে ২ রাকাত ফরজ টা আদায় করতে পারলেই কাজ শেষ, কমপক্ষে নাম টা তো খাতাই থাকল! অনেকে তো আছেন সেই নাম টাও খাতাই রাখার প্রয়োজন মনে করেন না। যাই হোক, আমি একবার এ রকম ঢাকার বাইরে খুদবা শুনছিলাম, হুজুর খুব সুন্দর করে বয়ান করছিলেন..যে, এক লোক নানা পাপ কাজে লিপ্ত ছিল, সে জীবনে ৯৯ টা খুন করেছিল, হটাত তার খেয়াল হল যে, সে তো জীবনে অনেক পাপ করেছে, তাহলে এখন তার কি হবে? সে কি মাফ পাবে? এ কথা ভেবে ভেবে সে অস্থির, তার অবস্থা দেখে তার এক বন্ধু তাকে জিজ্ঞাস করল তার কি হয়েছে? সে তার ঘটনা বর্ণনা করল আর তাকে জিজ্ঞাস করল সে মাফ পাবে কিনা? তার বন্ধু তাকে বলল যে, সে মাফ পাবে না। এ কথা শুনে সে আরও রেগে গেল ও তার বন্ধুকেও হত্যা করে ফেলল!!! সঙ্গে সঙ্গে তার সমস্থ গুনাহ মাফ হয়ে গেল!! এটা ছিল মুসুল্লিদের প্রতি সেই মসজিদের হুজুরের জুম্মাবারের বার্তা!
কি অবাক করা খুদবা? এ থেকে সাধারন মুসুল্লিরা কি শিখবে? মানে যাই করি না কেন আমরা মাফ পেয়ে যাব তউবা করলেই। তাই না? এমনকি বিনা কারনে খুন করলেও! আমরা সাধারণত হুজুরদের সব কথা শুনি না, কিন্তু এই ধরনের আজগুবি কথা আবার অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি। আর এই থেকেই নানা অন্যায় এর সুত্রপাত হয়। এই যে আমাদের বদ্ধমুল ধারনা যাই করি মাফ পাওয়া যাবে, আর এ কারনেই আমরা নানা পাপে উৎসাহিত হই। আমরা সবাই নামেই মুসলমান কিন্ত কাজের ক্ষেত্রে, সুযোগের না পেলে করিব না, কিন্তু সুযোগ পেলে ছাড়িব না। এমন অবস্থা। প্রতি ধর্মে তাদের প্রধানরা পাপ মোচনের কিছু সহজ পন্থা বলে দেন, আপনি যাই করেন না কেন? যদি মুসলমান হন তাহলে তওবা করলেই সব মাফ বা হজ্জ করে সব গুনাহ মাফ। যদি হিন্দু হন গচনা খেয়ে গঙ্গা স্নান করেলেই পাপ মচন। যদি খৃষ্টান হন তাহলে কনফেস করলেই সব পরিস্কার। কিন্তু আসলেই কি তাই? আমরা সব ক্ষেত্রেই কৌশল অবলম্বন করি, “একবার এক লোককে ধরা হল দুধে পানি মিশানর জন্য, সে কিরে কশম কাটল যে দুধে পানি মিশায় না। এমনকি ধর্ম গ্রন্থ তাকে দিয়া হলে সেটা ছুয়ে সে শপথ করল। যে সে দুধে পানি মিশায় না। সবাই থাকে বিশ্বাস করে ছেড়ে দিল কিন্তু পরে সেই একই অবস্থা এবার তাকে সরাসরি মারার জন্য সবাই প্রস্তুত হল, তার আগে সবাই তাকে আবার একই কথা জিজ্ঞাস করল সে একই উত্তর দিল। এর মধ্যে যখন সে বুঝল যে তার চালাকি ধরা পরে গেছে সে বলল, ভাই আমি তো মিথ্যা বলি নাই আমি তো দুধে পানি মিশাই না পানিতে দুধ মিশাই।”
আমাদের মধ্যে আমনই একটা অবস্থা বিরাজ করে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই, হযরত আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মানুষের উপর এমন এক যুগ অবশ্যই আসবে যখন মানুষ পরোয়া করবেনা যে কিভাবে সে মাল অর্জন করল, হালাল থেকে নাকি হারাম থেকে। “(সহীহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ১৯৫৩)
এরই রাস্তা ধরে আমাদের দেশে কবুতরের অনেক বড় বড় খামারিরা আছেন, যারা এই সেক্টর তাকে নিয়ন্ত্রন করেন। তারা যদি রাতকে দিন বলেন আপনাকে মেনে নিতে হবে! কারন আপনি ছোট খামারি। আর যেহেতু আপনি ছোট খামারি তাই আপনার জ্ঞান কম! কোন মতেই তাদের জ্ঞানের সাথে বরাবরি করতে পারবেন না। হোক না আপনি এই সম্পর্কে পড়াশুনা করেছেন বা আপনি বেশী জানেন তাতে কি যায় আসে? আর আমাদের চারপাশে মসাবেবের সংখ্যাও নেয়াত কম না! যারা এই ধরনের খামারি দের তাবেদারি করে! অনেকেই হয়ত এরই মধ্যে ভুরু কুচকে চিন্তা করা শুরু করেছেন যে, আমি কেন হেয়ালিপনা কথা বলছি? আমি মোটেই হেয়ালিপনা কথা বলছি না। আমাদের দেশে যখন রিং এর আমদানি করা কবুতরের রমরমা একটা ব্যাবসা চালু হয়েছে সেখানে কিছু খামারি গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত, নতুন নতুন কবুতর আবিস্কার করছেন, আমাকে কয়দিন আগে একজন জানালেন তিনি ১ জোড়া মন্টানা কিনেছেন! এটা কি ধরনের কবুতর? দেখলাম বুঝালাম যে, কিং+মদিনা= মন্টানা। চমৎকার আবিস্কার, যেমন আবিস্কার, অপরাজিতা, যেমন আবিস্কার লাজুক/সেজুক লক্ষা! আর আমরা এই ধরনের অত্যাচারে যখন অতিষ্ঠ তখনি এই ধরনের খামারিরা তাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়র কারিশমাতে রঙ ও নামের উপর তাদের জাদুকরি প্রভাব বিস্তার শুরু করেছেন কি সেগুলো? আমাকে একজন খামারি তার কবুতরের রঙের ভুল ধরিয়ে দেয়াতে আমাকে বললেন, যে এর অনেক শ্রেনিবদ্ধ ভাগ আছে আসলে কি তাই ? না তা ঠিক না একেবারেই আমাদের দেশের মত এত কবুতরের শ্রেনিবদ্ধ বিভাগ পৃথিবীর আর কোন দেশেই নাই। আর এগুলো আমরা আমাদের স্বার্থেই তৈরি করে নিয়েছি। আমাদের নিজেদের সুবিধার জন্য তাহলে ভুক্তভুগি কে? আপনি নিজেই বুঝে নিন না?
আল্লাহ্ বলেন,”আর যদি তারা তোমার সাথে প্রতারণা করতে চায়-বস্তুতঃ তারা আল্লাহর সাথেও ইতিপূর্বে প্রতারণা করেছে, অতঃপর তিনি তাদেরকে ধরিয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত, সুকৌশলী।“(সূরা আল-আনফালঃআয়াত-৭১)
যেমন আমাদের দেশে নেতা নেত্রিদের মত বড় খামারিরাও যে কথা বলবেন সেটাই সত্যি আর সেটাই সঠিক, এর কোন ব্যাতিক্রম নাই। মানে একজন বড় খামারি যদি কোন কবুতর কে হলুদ রঙ এর বলেন অবশ্যই আপনাকে তা মেনে নিতে হবে না হলে আপনি কিছু জানেন না। আর এদেরই কিছু মোসাহেব আছেন যারা এদের কথা হালাল করার জন জি হুজুর জি হুজুর করতে থাকেন। বা বুঝুক আর নাই বুঝুক লাইক দিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু উনারা জানেন না এর ফলে যে এই কবুতর খাতের বারটা বেজে যাচ্ছে। কি আসে যাই এই সেক্টরের উন্নতি ও অবনতি নিয়ে, কারন তাদের তো পকেট ভারি হচ্ছে। সেক্টরের উন্নতি দিয়ে কি ধুয়ে ধুয়ে পানি খাব? টাকাই যদি না থাকে? আমাদের জন্য আজ টাকাই সব। ঈমানের কোণো মূল্য নাই। এরা তো জ্ঞানপাপী, এসব খামারিরা সব জানে কিন্তু নিজেদের স্বার্থের জন্য তা গোপন করে, আর এদের সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, “ আর যে লোক গোপন করবে সে কিয়ামতের দিন সেই গোপন বস্তু নিয়ে আসবে। অতঃপর পরিপূর্ণভাবে পাবে প্রত্যেকে, যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোন অন্যায় করা হবে না।“(সূরা আল ইমরানঃআয়াত- ১৬১)
এদের সম্পর্কে আল্লাহ্ আরও বলেন,”আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে, তা মানুষের নিকট বর্ণনা করবে এবং গোপন করবে না, তখন তারা সে প্রতিজ্ঞাকে নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল আর তার কেনা-বেচা করল সামান্য মূল্যের বিনিময়ে। সুতরাং কতই না মন্দ তাদের এ বেচা-কেনা।“(সূরা আল ইমরানঃআয়াত-১৮৭)
কবুতরের সেক্টরের কিছু লোক মনে করেন আসলেই তারা কবুতরের উন্নয়নের কল্পে অনেক কিছু করে ফেলেছেন। কিন্তু আসলেই কি তাই, আমরা যদি কাজের সংজ্ঞা নিয়ে একটু আলোচনা করি তাহলে কি দেখি? দৈনন্দিন জীবনে কাজ সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা তার সাথে পদার্থবিজ্ঞানগত ধারণার বেশ পার্থক্য রয়েছে। যেমন কোন বস্তুকে দুহাতে আঁকড়ে ধরে উপরে তুলে আবার যেখান থেকে তোলা হলো সেখানে নামিয়ে রাখলে পদার্থবিজ্ঞান এর দৃষ্টিকোন থেকে কাজের পরিমাণ হবে শূন্য, অথচ নিত্যদিনকার ধারনামতে আমরা এটাকেও হয়ত কাজ বলব কারণ এর মাধ্যমে উত্তোলনকারী ক্লান্ত এবং ঘর্মাক্ত হয়ে পড়তে পারেন। পদার্থবিজ্ঞান এর ভাষায়, বল এবং বলের দিকে সরণ-এর উপাংশ ও এর গুণফল হলো কাজ। অর্থাৎ আপনি যে উদ্দেশ্যে কাজটি শুরু করলেন মানে লোক দেখানোর জন্য সেটা যদি আপনি নাম কামানোর জন্য করেন তাহলে সেটাকে কাজের কাজ বলা হবে কিনা সেটা আপনার উপর ছেড়ে দিলাম।
“যে সৎকাজ করছে, সে নিজের কল্যাণার্থেই তা করছে, আর যে অসৎকাজ করছে, তা তার উপরই বর্তাবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।“(সূরা আল জাসিয়াঃ আয়াতঃ১৫)
আমাদের দেশে কিছু ধরনের মানুষ আছেন যারা শুধু চাই নিজের নাম,সুনাম ও পরিচিতি আর এ জন্যই এত সব আয়োজন। এ ধরনের লোকরা নিজেদের কবুতরপ্রেমি বলে পরিচয় দেয় কিন্তু এর ক্ষতি করার জন্য হেন কাজ নাই যা তারা করে না।
“তুমি মনে করো না, যারা নিজেদের কৃতকর্মের উপর আনন্দিত হয় এবং না করা বিষয়ের জন্য প্রশংসা কামনা করে, তারা আমার নিকট থেকে অব্যাহতি লাভ করেছে। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।“(সূরা আল ইমরানঃআয়াত-১৮৮)
উনারা কবুতরের উন্নতি কল্পে নানা গ্রুপ খুলে বসে আছেন ঠিক যেন দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। উদ্দেশ্য কি? গ্রুপ সদস্য সংখ্যা বাড়ান? এক এক গ্রুপ এর অ্যাডমিন, এই বলে দাবি করেন জানেন আমাদের গ্রুপ এ ৮০০০ সদস্য আমার গ্রুপ এ ১০,০০০ সদস্য! যে সদস্য আপনার বা আমাদের কোন কাজ আসে না বা যে সংখ্যা শুধু গননাই বাড়ায় সেই সংখ্যা দিয়ে কি হবে, সেটা একজন হলেই কি? আর একলক্ষ হলেই কি? একটা কথা মনে রাখতে হবে দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভাল। আর একজন নেতা যেমন ভোটের লোভে ভোটারদের সব অন্যায় মেনে নেন, আমাদের এইসব গ্রুপ এর অ্যাডমিনরাও এইসব ফেক সদস্যদের কিছু বলেন না, কারন গ্রুপ এর জনপ্রিয়তা কমে যাই যদি। এই ধরনের ফেক জনপ্রিয়তা দিয়ে আপনার কি হবে যদি আল্লাহ্ কে আপনি রাজি খুশি করতে না পারেন আপনার লক্ষ্য যদি ঠিক না থাকে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন”আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন নাই।“(সূরা আস শুরাঃআয়াত-৪০)
যে শব্দ দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর পরিচয় জানা যায় তাকে নাম বলে। আমরা জন্ম গ্রহন করার পর আমাদের পিতামাতা আকিকা বা ধুমধাম করে নাম রাখেন, মরার পরও সেই নাম ধরেই ডাকা হবে, আর আমরা সবইকে কবর থেকে একে একে উঠতে হবে। কিন্তু আজকাল খুবই অবাক ও দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে সামাজিক সাইট গুলোতে মানুষজন সেই নামে পরিচিত হতে লজ্জা বোধ করেন। কেন? কারন ছদ্ম নামে যেকোনো অপকর্ম গুলো করা যাই নিশ্চিন্তে । আমাদের মনে যদি কুটিলতা না থাকে তাহলে ত এ রকম হবার কথা না ! এ সব আইডি করে নানা অপকর্ম, নানা অযাচিত মন্তব্য করা যায় নিচিন্ত মনে!
কারো নাম ‘আমার আমি’ কেউ বা ‘একান্ত আমি’ আবার কেউ ‘একাকি আমি’ কোনটা ‘আগুন’ কোনটা আবার “পানি” কেউ আবার “যত লাইক চান তত দিব”, “মাইরা ফালামু” কোনটার নাম “হৃদয়ে গোলাপ” কেউ আবার নানা ধরনের ইংলিশ সব শব্দ ব্যাবহার করে রাখা হয় ইত্যাদি। কেউ আবার আজব সব ছবিও ব্যাবহার করে থাকেন এই সব আইডি গুলোতে কোনটা ভুতের কোনটা পিশাচ কোনটা আবার সাপ এই ধরনের আজগুবি ও ভয়ঙ্কর সব ছবি ব্যাবহার করেন,কেন? এমনকি আর আমার ধারনা, এ রকম এক এক জনের ৭-৮ আইডি আছে। আমরা Hollywood এর সিনেমা গুলোতে দেখি যে কোন প্রকার ডাকাতি বা খুন খারাবি বা কোন অপ কর্ম করার জন্য মুখোশ ব্যবহার করা হয়। এই সব সামাজিক সাইট গুলোতেও ইদানিং একই অবস্থা। তাহলে কি আমরা ধরে নিব? অনেকেই আছেন কোন গ্রুপ এ যোগ দিবার জন্য ছবি ব্যাবহার করেন, কিন্তু যোগ হবার পরপরি ছবি পাল্টে ফেলেন, কেন? এতে কি লাভ হবে? এ সমস্থ কাজ যারা করেন তারা আবার এগুলোর জন্য কিছু না কিছু, কোন না কোন যুক্তি দাঁড় করানর চেষ্টা করে থাকেন। সে যুক্তিই দাঁড় করানর চেষ্টা করেন না কেন, যেকোনো যুক্তি হয়ত আপনি আপনার মানসিক প্রসান্তি পাবেন কিন্তু হিসাব থেকে পার পাবে না।
এ ধরনের লোক সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, “যখন ফিরে যায় তখন চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণনাশ করতে পারে। আল্লাহ ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না।“(সূরা আল বাক্বারাহ 205)
একলোক তার ছেলের মান খুবই সখ করে নাম রাখল খিঞ্জীর। আর তার নাম কেউ সুনলেই প্রথমেই ভুরু কুচকে যেত, কেন? কারন তার নামের অর্থ ছিল “শূয়র” কেন এ রকম নাম রাখা হল? যেহেতু এটা আরবি শব্দ আর যেহেতু এই শব্দটা কোরআনে আছে, আর যেহেতু হুজুর বলেছেন যে, কোরআনের ১ টা শব্দ উচ্চারন করলে ১০ তা নেকি তাই তার বাবা মা তার এরূপ নাম রেখেছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রতিতা নামের একটা তাসির আছে যা মানুষের স্বভাব ও চরিত্র কে প্রভাবিত করে থাকে।
এ সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে-আলী ইবন আব্দুল্লাহ (রহঃ) আবূ হ্বামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ” আল্লাহ তা’আলা আমার নিকট সর্বাধিক নিকৃষ্ট নামধারী অথবা বলেছেন, সব নামের মধ্যে ঘৃণিত নাম হল সে ব্যাক্তি, যে রাজাধিরাজ- নাম ধারণ করেছে। সুফিয়ান বলেন যে, অন্যেরা এর ব্যখ্যা করেছেন, শাহান শাহ। ” (সহীহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৫৭৭৩ )
যাইহোক আসল কোথাই ফিরে আসি। একটু চিন্তা করবেন ছদ্ম নামে কোন ভাল কাজ করা যাই না। বিশেষ করে সেটা যদি অসভ্য বা অশ্লীল হয়। কোন গ্রুপ এ ছদ্দনামে প্রবেশ করাটা অনেকটা বিনা অনুমতিতে প্রবেশের মত আর অনেকেই এ ধরনের কাজ করে থাকেন অবলীলায় ? ছদ্ম না ব্যাবহার ও লুকিয়ে বিনা অনুমতিতে শুনা বা বিনা অনুমতিতে কারো বাড়িতে প্রবেশ কি আপনার এক ধরনেরই মনে হয় না, আমার ধারনা দুটোই এক। আপনি ছদ্ম নাম ব্যাবহার করে আপনি আরেকজনের গ্রুপ এ প্রবেশ করলেন, যিনি চান না আপনি তার গ্রুপ এ থাকেন, এটা বিনা অনুমতিতেত প্রবেশ বা উকি মারার সমান।
আর বিনা অনুমতিতে প্রবেশের বা উকি মারার ব্যাপারে হাদিসে কি বলে বূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) -কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা হচ্ছি (পৃথিবীতে) সর্বশেষ ও (আখিরাতে) সর্বপ্রথম। উক্ত হাদীসের সুত্রে এও বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ যদি কেউ তোমার ঘরে তোমার অনুমতি বেতিরেখে উকি মারে আর তুমি পাথরঁ নিক্ষেপ করে তার চক্ষু ফূটা করে দাও, তাতে তোমার কোন গুনাহ হবে না। (সহীহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৬৪২১)
যদিও আমার বলার মতলব এটা না যে, আমি এ রকম করাতে উৎসাহিত করছি, বা কাউকে এটা করার জন্য পরামর্শ দিতেছি, বরং এটা বলার উদ্দেশ্য হল এটা কত বড় অন্যায় সেটাই বুঝান। আমারা সামাজিক সাইট গুলো তে বন্ধু বানাই, যেখানে কোন নুংরামু থাকবে না, যেখানে একজন আরেকজনকে নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করবে। একজনের বিপদে আরেকজন ঝাপিয়ে পড়বে। আর এই বন্ধুর কোন সিমা থাকবে না। কিন্তু আমরা সংস্কার যুক্ত মানসিকতাই আছন্ন, আমারা একই ব্যাপার ছাড়া অন্য কিছু থাকতে পারে সেটা চিন্তা করতে পারি না। আর কেনই বা আপনি ছদ্ম নাম ব্যাবহার করবেন? কারন আপনি একজন খামারি আর ভবিষ্যতে আপনি আপনার পরিচয়ে বড় খামারি হবেন লোকে আপনাকে এক নামে চিনবে।তাহলে কেন এরূপ ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়া?
হযরত মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হযরত আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরন মেশক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়। আতর বিক্রেতার থেকে তুমি রেহাই পাবেনা। হয় তুমি আতর খরিদ করবে, না হয় তার সুঘ্রান পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার ঘর অথবা কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে। (সহীহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ১৯৭১)
আল্লাহ্ বলেন, “যার প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। শয়তান বললঃ আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে আশ্বাস দেয়। শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা সব প্রতারণা বৈ নয়।তাদের বাসস্থান জাহান্নাম। তারা সেখান থেকে কোথাও পালাবার জায়গা পাবে না।” (সূরা আন নিসাঃআয়াতঃ-১১৮-১২১)
আমি জানি আমার এই পোস্ট আগের পোস্ট গুলোর মতই হবে, সবাই পড়বে কিন্তু কিছু মানুষ ছাড়া আর কেউ মানবে না। মানার কথাও না। কারন আমাদের চামড়া মোটা হয়ে গেছে কানের মধ্যে ঠুলি পরে গেছে। আমাদের ঢাকা শহরের সিটি সার্ভিস বাস গুলোর দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখব, কোনটা বিরতিহিন, গেট লক, সিটিং(চিটিং) ইত্যাদি কিন্তু কয়টা বাস আছে তারা তাদের সেই সার্ভিস দেয়? একবার এ রকম এক সিটি সার্ভিস বাসে উঠলাম তার সিটিং হয়ে গেছে তারপরও সে গাড়ি ছাড়ছে না। লোকজনের ধৈর্যচ্যুতি ঘটল অনেকেই গালিমন্দ করা শুরু করল, কিন্তু আশ্চর্য হয়ে দেখলাম কন্ডাক্টর আর চালকের কোন বিকার নাই! চালক একটা ম্যাচের কাঠী দিয়ে কান চুলকাচ্ছে আর কন্ডাক্টর বাইরে নেমে গুলিস্তান বলে চিৎকার করছে। গালির পরিমান যখন বেড়ে গেল, তখন দেখলাম। চালক ম্যাচের কাঠির উল্টা পিঠ দিয়ে দাঁত খিলাল করতে লাগল জানালা দিয়ে বাইরে মুখ বের করে রাখল। বুঝলাম এদের ঘিনপিত বলে কিছুই নাই, আর কথা আর গালি শুনতে শুনতে এরা অভাস্ত হয়ে পড়েছে।
(একবার কিছু নেতারা বক্তিতা দিচ্ছিলেন, একের পর এক অনেক কথা অনেক প্রতিশ্রুতি! সবশেষে বড় নেতা আসবেন এর ফাকে এক পাগল কোথা থেকে যেন দৌড়ে আসে মঞ্চে উঠে পড়ল, তার পড়নে একটা ছেঁড়া লুঙ্গির মত এক টুকরা কাপড়, সে হটাত করে পরনের কাপড়টা খুলে তার ঘাড়ে ফেলে চিৎকার করে মাইকে বলল আগে বস্র সমস্যার সমাধান চাই! সবার সম্ভিত ফিরে পেতেই তাকে সবাই মিলে ধরে মঞ্চ থেকে নামাল। বাইরের অনেকেই মনে করল যে সেও একজন বড় মাপের নেতা তাই সবাই প্রচুর করতালি পড়ল। এরপর বড় নেতা মঞ্চে উঠলেন এরপর শুরু করলেন, আমাদের খাদ্য ,বস্ত্র ও চিকিৎসা সমস্যার সমাধান করতে হবে! এ সময় বাইরে থেকে এক লোক চিৎকার করে বলে উঠল “আরে মিয়া এরকম করে কয়লে কি হোইব?, হের মত লুঙ্গি কাঁধে লন, হেরপর কন!“)
এটা একটা সাধারন ঘটনা, কিন্তু এটা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, আমাদের চারপাশে এ রকম হাজারও লোক আছেন। যারা জিবনেও একটা ভাল কাজ করেছেন কিনা খুজে পাওয়া যাবে না, কিন্তু সমালচনার ক্ষেত্রে ১০০% আগে। এটা করলে অমুক হত সেটা করলে তমুক হত, সে খেলোয়াড় সাড়া জীবন ভুল শট খেলে খেলে আউট হয়েছেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি অন্যের সমালোচনা করা শুরু করেন, এই শট টা খেলা ঠিক হয়নি, ওটা এমন ভাবে খেলা উচিৎ ছিল ইত্যাদি। কিন্তু জিবনেও তিনি ভাল ভাবে খেলার চেষ্টাও করেনি, নিজের ভুলগুলো শুধরিয়ে। আর তাই আজকাল টিভি গুলোতে টক শো এর কদর বেশী। যে সব লোক জিবনেও একটা ভাল কাজ করেছেন কিনা খুজে পাওয়া যাবে না তারা বসে বসে টক শো গুলোতে সমালচনার ঝড় তুলেন। যেন তিনি সমালোচনা করলেই দেশ উদ্ধার হয়ে যাবে। এমনকি এসব লোকগুলো একটা ভালকাজ করে নিদর্শন সৃষ্টি করতে পারেনা। কিন্তু তারপরও, সমালোচনা করা সোজা কিন্তু কাজটি করা কঠিন। আর আমরাও কিছু বুঝি আর না বুঝি সাধু সাধু করে সাবাস দিতে থাকি।
“প্রত্যেকের জন্যে তাদের কর্মের আনুপাতিক মর্যাদা আছে এবং আপনার প্রতিপালক তাদের কর্ম সম্পর্কে বেখবর নন।“(সূরা আল আন-আমঃ আয়াত- ১৩২)
কিছুদিন আগে আমার একটা পোস্ট এর সমালচনায় বলেছিলেন, আমরা যারা কবুতর পালক তারা সবাই একই নৌকার যাত্রী, তাই একটু ভেবে দেখবেন? উনার কথা ১০০% ঠিক আমরা সবাই একই বাহনের যাত্রী ,কিন্তু সবাই তো আর যার যার স্বার্থের বোঝা মাথাই নিয়ে বসে নাই। তাই না? তাই এখন সময় এসেছে, আসুন আমরা আমাদের স্বার্থের খোলস থেকে বের হয়ে আসি তাহলেই হয়ত সবচেয়ে ভাল হয়। আর এ কাজ করতে আমাদের ইচ্ছা ও চেষ্টাই যথেষ্ট বাকিটা আল্লাহপাক ব্যাবস্থা করে দিবেন। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সথিকভাবে জীবন গঠনের তৌফিক দান করুন আমীন।
পরিশেষে, আবূ নু’মান (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইব’ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। একজন শ্বাসক সে তার অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন স্ত্রী তার স্বামীর গৃহের রক্ষক, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন গোলাম তার মনিবের সম্পদের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে।“(সহীহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৪৮০৯)
মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই
ভুল সবই ভুল (কবুতরের কেস স্টাডি ষষ্ঠ পর্ব) BD Online Pigeon Market

Pigeon Discussion, Pigeon Diseases & treatment
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন