আমি এক সময় একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি তে কর্মরত ছিলাম প্রায় ১২ বছর সময়। আর এই দীর্ঘ সময়ে যে সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা আমার পরে অনেক কাজে লাগছে ও এখন লাগছে। সেই সময়ে আমাকে প্রায় একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা নিতে হত তা হল, প্রায় আমাদের বাইরের প্রধান অফিস থেকে জুনিয়র লেভেল এর লোক আসত আর আমার উপর দায়িত্ব পড়ত তাদের ট্রেনিং দিবার জন্য, এরপর তারা চলে যেত, তারা যখন আসত তখন আমাদের অনেক সিনিয়র পর্যায়ের সহকর্মীরা তাদের একটু অতিরিক্ত সমিহ করত, এমনকি জুনিয়র হবার পরও তাদের স্যার স্যার বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলত। এই এটা নিয়ে আমার সিনিয়র দের সঙ্গে লাগত আমার। আর হয়ত এ কারনেই হোক বা সেই বিদেশী সহকর্মীর বদৌলতেই হোক ৭ বছর আমার কোন পদন্নোতি হয়নি। কিন্তু যেদিন আমি সেই কোম্পানি থেকে ইস্থফা দেয় সেদিন আমার একসঙ্গে ৩টি প্রমোশনের অফার দিয়া হয়। যদিও আমি সেই প্রস্তাব ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে চলে আসি। যাই হোক যা বলছিলাম, তো কেন এই বিদেশী প্রীতি?
প্রথমত প্রধান অফিসের লোক আর দ্বিতীয়ত বিদেশী। আর এই বিদেশী প্রীতি কেন জানি আমাদের মধ্যে একটা মজ্জা গত ব্যাপারে দাঁড়িয়েছে। বিদেশী বেণিয়ারা আমাদের এই উপমহাদেশে ২০০ বছর রাজত্ব করেছে। হয়ত সে কারনেই তাদের কোন ১ জোড়া জিন এখন আমাদের ১৩ জোড়া জিনের মধ্যে বিরাজ করছে। এটি কোন বিছিন্ন ঘটনা নয়। এটা শুধু একটা উধারন মাত্র। বিদেশী শুধু মানুষই না যেকোনো বিদেশী জিনিষ দেখলেই আমাদের মাথা নষ্ট হয়ে যাই। একবার বাণিজ্য মেলাতে এক জায়গায় অনেক ভিড় রিতিমত মারামারি লাগার মত! কি ব্যাপার কাছে গিয়ে দেখি, সেখানে অনেক পুরানো বিদেশী হাতল ভাঙ্গা সসপ্যান, টোস্টার, আইরন ইত্যাদি নানা ধরনের জিনিষ সস্তায় বিক্রি করছে আর মানুষরা সেগুলো যে যা পারছে কিনছে, কোন বিচার বিবেচনা না করেই। আদৌ এগুলো ঠিক আছে কিনা? বা এগুলো আর ব্যাবহার করা যাবে কিনা?
কোন ভ্রূক্ষেপ নাই। কিনছে তো কিনছেই। কি আশ্চর্য রকম আমাদের বিদেশী প্রীতি! আমাদের দেশের কবুতর সেক্টরেও ঠিক একই দশা, একজন খামারি যদি অনেক কষ্টকরে একটা ভালজাতের কবুতর যদি আজ বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেয় তাহলে প্রথমেই যে প্রশ্নের সম্মুখিন হন তাহল এটা কি রিং এর? যদি সে নিজের রিং লাগান তাহলে, দ্বিতীয় প্রশ্ন হল আপনার কবুতর কি ই এর রিং নাকি এনপিএ রিং এর? যদিও বলে রাখা ভাল এই এর রিং বা এনপিএ রিং এর ব্যাপারে অধিকাংশ লোক জানে না, তারপরও। আপনি যদি এটা ভুয়া রিং লাগান তাতেও ভাল কিন্তু আপনাকে করতে হবে। আর এতে করেই দুর্নীতিকে প্রস্রয় দিয়া হচ্ছে বা এক শ্রেনির মানুষ এই ধরনের কাজে উতসাহিত হচ্ছেন। এর পর যদি তিনি(ক্রেতা) সন্তেস্ট হন তখন আসবে দামের ব্যাপার! আপনি যে দাম বলবেন ক্রেতা নির্ঘাত তার অর্ধেক দাম বলবেন। হোক না আপনার কবুতর বড় সাইজ বা সুস্থ বা ভাল মারকিং এর কিছু আসে যাই না। হয়ত দাম শুনে রাগে আপনার মাথার চুল খাড়া হয়ে যাবে বা আপনার মাথা গরম হয়ে যাবে, আপনি যদি প্রেসারের রুগী হন তাহলে হয়ত আপনার রাগে ব্লাড প্রেশারও বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু মাথা গরম করা যাবে না ক্রেতা বলে কথা ! আপনার যদি ঠেকা থাকেন তাহলে আপনি হয়ত রাজি হয়ে যাবেন তার প্রস্তাবিত দামে, আর যদি তানা হয় তাহলে হয়ত আপনি অন্য ভাবে চিন্তা করবেন। আর এ কারনেই ঠকবাজি বা ভণ্ডামি বেড়ে গেছে বহুগুণে। যাইহোক, অপর দিকে কবুতর আমদানির নামে আজ আমাদের দেশে এক দুঘলকি কারবার চলছে! ফান্স্যি সব কবুতরই বিদেশী কিন্তু তার পরও নতুন আমদানি করা কবুতরের প্রতি একটা মোহ আজ আমাদের পেয়ে বসেছে এক নেশার মত, হোক না সেটা খারাপ জাতের হোক না তৃতীয় গ্রেড এর হোক না অসুস্থ হোক না মরাধরা কিছু যাই আসে না, যে কবুতর আমাদের দেশে ৫০০ টাকাতে কেউ নিবে না, সেগুলো ১০ গুন দামে কিনছেন। ব্যাপার টা অনেকটা এ রকম যে বিদেশী বা উচ্চবিত্ত একটা লোক ছেরা প্যান্ট পরে হাঁটলে সেটা স্টাইল আর আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা ছেলে যদি করে তাহলে সেটা বলবে তার প্যান্ট নাই তো তাই! আর দামের তো কোন ব্যাপারি না। ২০ হাজার টাকার কবুতর ৪৫ হাজার কোন ব্যাপার না। আর কবুতর কেনার পর বাসায় নিবার পর মরে গেল কোন আফসোস নাই। আরে রিং এর কবুতর বলে কথা। কথাই আছে হাতি মরলেও লাখ টাকা। আমি যদিও জানি না যে, যাদের এই কবুতর গুলো মারা গেছে সেগুলো কে মমি বানিয়ে রেখেছেন কিনা? শুধু এটা না, এ ধরনের কিছু লোক এসব কবুতর কেনার পর গর্ব ভরে সামাজিক সাইটে আপডেট দেন, আবার কিছু আছেন যারা ফোন করে জানা, ভাই আজ ২/৩ জোড়া রিং এর কবুতর কেনা ফেললাম, যদিও দামটা একটু বেশী নিয়েছে, কিন্তু রিং এর বলে কথা! কি ধরনের অবাক করা কথা।
আল্লাহ্ বলেন,“এটা এজন্যে বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও তজ্জন্যে দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তজ্জন্যে উল্লসিত না হও। আল্লাহ কোন উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।“(সূরা আল হাদিদ-আয়াতঃ২৩)
আমরা কেন ভুলে যাই? যে আমরা, আমদানিকৃত নতুন জাতের কবুতরই কেবল কিনছি না সেই সাথে আমদানি করছি নতুন জাতের কবুতরের রোগ বালাই আর আমরা সেগুলো উচ্চ দামে কিনছি। আগে শুধু দু এক জন আমদানি কারক ছিল কবুতরের! কিন্তু যেহেতু এটা একটা ভাল ব্যাবসা তাই (কিছু উৎসুক ব্যাক্তি) আজ ব্যাঙের ছাতার মত নতুন নতুন অনেক কবুতর আমদানি কারক তৈরি হয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা কি ভুলে গেছি যে ২ দিন পর এই আমদানি করা কবুতর কে কিনবে? আর যেগুলো দেশে ব্রীড হচ্ছে সেগুলো? তবে কি বিদেশী দের মত আমরাও উচ্চ ব্রীড কবুতরের গোশত খাওয়া শুরু করব? নাকি বিনিময় প্রথার মত খামারি দের মধ্যে কবুতরের লেনদেন প্রথা চালু করা হবে? আজ আমাদের দেশে এই আমদানি করা কবুতর বিনা পরীক্ষায় দেশে প্রবেশ করছে ও বিনা বাধায়, কেউ দেখার নাই। ফলে কি হচ্ছে আজ, যে সব রোগ বালাই এ দেশে আজ পর্যন্ত দেখা যাইনি সেগুলো মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। যদিও এ সেক্টরের কিছু দালালরা এসব কথা মানতে নারাজ, তারা এইসব কঠিন রোগ কে সেই ফর্মুলাতে ফেলে দায় থেকে বাচতে চাই। কোন খামারে কোন কবুতর মারা গেলে হয়ত বলবে যে, প্যারামক্সি বা রানিক্ষেত হয়েছে। জানুক আর না জানুক মন্তব্য করতে ত আর পয়সা লাগে লাগে না তাই না?
আল্লাহ্ বলেন,”সমান নয় ভাল ও মন্দ। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু।” ( সূরা হা-মীম সেজদাহ আয়াতঃ৩৪)
যাই হোক আমাদের ভাল আমাদেরকেই বুঝতে হবে। লাভ হলে যেমন আমাদেরই তেমন ক্ষতি হলেও কিন্তু এই দায়ভার আমাদেরই। আমরা আমাদের কবুতরের অভিভাবক ফলে আমাদের ক্ষতি অন্য কেউ বলে দিবে না, আমাদেরকেই এটার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
পরিশেষে, কোরআন এ আল্লাহ্ তায়ালা এ ধরনের লোকদের সম্পর্কে বলেন,”যখন ফিরে যায় তখন চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণনাশ করতে পারে। আল্লাহ ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না।” (সূরা আল বাক্বারাহ আয়াতঃ ২০৫)
মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই
আমারা কি সঠিক পথে আছি? (কবুতর এর কেস স্টাডি) BD Online Pigeon Market

Pigeon Discussion
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন