বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

কবুতরের গ্রীষ্ম কালীন মাসিক ছক

কবুতরের গ্রীষ্ম কালীন মাসিক ছক আমাদের দেশে ঋতু পরিবর্তন এর সাথে সাথে কবুতরের রোগ বালাই ও তাদের ধরন পরিবর্তন করতে থাকে। আর আমাদের কম বেশি সকলের বাসায় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটু বেশি খেয়াল নিতে হয় এই সময়ে। কারন বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু কম থাকে, আর তাদের নাজুক স্নায়ু এর কারনে। বাচ্চাদের মত আমাদের বাসাতে সখের বশে নানা ধরনের পোষা প্রাণী পালন করে থাকি, আর সেগুলোর মধ্যে কবুতর অন্যতম। আর রোগের ক্ষেত্রে সৌখিন কবুতর (fancy pigeon) রোগ বালাইয়ের দিক দিয়ে একটু বেশি এগিয়ে। কিছু হলেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। সেটা মৌসুম পরিবর্তন, ও পরিকল্পিত ব্যাবস্থাপনা, একটু কম পরিচর্যা ইত্যাদি এদিক ও দিক হলেই দেখা যায় সমস্যা শুরু। কিন্তু আমরা যদি একটু খেয়াল রাখি তাহলেই এ সব অনাখাংখিত পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে পারি অনায়াসে। যেমন কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা, কিছু প্রাথমিক ধারনা, বা অপ্রয়োজনীয় ঔষধের প্রয়োগ থেকে বিরত থাকা, বা না জেনে ঔষধ প্রয়োগ না করা ইত্যাদি। যেমন বেশীরভাগ ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা ও ডায়রিয়া তৈরি হয় পুষ্টি হীনতা ও অ্যান্টিবায়টিক এর অযাচিত প্রয়গ থেকে তেমনি আবার বেশীরভাগ রোগ বৃদ্ধি পেয়ে মারাত্মক অবস্থা হয় না জেনে ঔষধ প্রয়োগ ও ধর্জ্জ না ধরার কারনে।



একটি কবুতর না খেয়ে অনেক দিন বেচে থাকতে পারে, সেটা অসুস্থ বা অন্য যে কোন কারনেই হোক, আপনি যদি তার পানি শূন্যতার প্রতি খেয়াল করেন তাহলে আপনি তার রোগ নিরাময় করার সুযোগ পাবেন। আবার হয়ত সুস্থ হয়ে এক সপ্তাহ ঠিক মত খাবার পেলে আবার ভাল স্বাস্থ্য ফিরে পেতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ খামারি এটি বাদ দিয়ে খাওয়ানোর ব্যাপারে ব্যাতিবাস্ত হয়ে পড়েন আর সেটা কি ধরনের খাবার, যেটা হজমের ক্ষেত্রে কঠিন। যেমন বেশীরভাগ ক্ষেত্রে খামারিরা ছোলা বুট ভিজিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন, বা এই ধরনের দুস্প্রাচ্চ খাবার যা অসুস্থ অবস্থাই আমার নিজেরাও হয়ত খাব না। অথবা কোন ঔষধ চলাকালিন সময়ে ভিটামিন যুক্ত করা। যার ফলাফল উল্টো হয়ে যায়। তাই আগে আপনার খামারে কবুতর কে সুস্থ করার আগে আমাদের মানসিক ভাবে সুস্থ হতে হবে। অনর্থক ধ্যান ধারনা থেকে বেরিয়ে আস্তে হবে। নেতিবাচক বা কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকতে হবে। কান চিলে নিয়েছে এই ধরনের কথার পিছনে না ছুটে নিজের বিচার বুদ্ধি কে কাজে লাগাতে হবে। আপনাকে সেই জায়গাতে চিন্তা করতে হবে যে আপনি এই জাইগায় থাকলে কি ঔষধ খেতেন আর কি করতেন। তাহলেই আপনার অর্ধেক সমস্যা কমে যাবে।


একটা কথা মনে রাখতে হবে, কবুতর পালন আমাদের, নেশা,পেশা,সখ বা তার থেকেও বেশি কিছু। তাই এটা নিয়ে ছেলে খেলা বা অন্যের খেয়াল খুশির উপর নির্ভর করা যাবে না। অনেক সময় পার হয়ে গেছে এখন আমাদের জেগে উঠার পালা। তাই জেগে উঠুন আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কে কাজে লাগান। আপনার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগান। যাই হোক আমার এবার কাজের কথাই আসি। শীত প্রায় গত হয়েছে আর গ্রীষ্ম প্রায় আগত, আর শীতের আগামন ও গত এই সময় তাই বেশি রোগ হয়। আর একজন খামারির সফলতা ও ব্যার্থতা এই সমটাতেই নির্ভর করে। আশা করি অন্য যেকোনো শীতের থেকে এই শীত আপনারা ও আপনাদের খামারে তেমন বেশি রোগের প্রকোপ হয়নি। তার কারন আপনি একটু সচেতন ছিলেন। এমন অনেক শীত গেছে যে শীতে খামার কে খামার উজাড় হয়ে গেছে। যায় হোক শীতের আগমন ও গত এর সময় যে রোগের বেশি প্রাদুর্ভাব হয়, আর তা হল ঠাণ্ডা, পাতলা পায়খানা, ডিপথেরিয়া ইত্যাদি। আর আপনার যদি এ সব রোগের সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান থাকে। তাহলেই হয়ত আপনি উতরে যেতে পারবেন, অনর্থক ঔষধ ব্যাবহার করে এর কোন ফল পাবেন না। আসুন আমরা মাসে কিভাবে ঔষধ ও ভিটামিন প্রয়োগ করব তারই একটি ধারনা নেবার চেষ্টা করি-


প্রথম পর্যায়ঃ (প্রতিরোধক)


১) সাল্মনেল্লা কোর্স- ২ টেবিল চামচ শাফি+ ২ টেবিল চামচ ফেবনিল ১ লিটার পানিতে মিক্স করে ৪-৫ দিন সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (একটানা)। (হোমিও ব্যাপ্তেসিয়া ৩০, ১ সিসি =১ লিটার পানিতে মিক্স করেও আপনি এই কোর্স করাতে পারবেন। (একটানা ৪-৫ দিন।)

বিঃদ্রঃ এই কোর্স চলাকালীন কবুতর সবুজ পায়খানা করতে পারে, আর এই অবস্থাই ঔষধ বন্ধ করা যাবে না, এটা ভিতরের জীবাণুকে বের করতে সাহায্য করে।


২) অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ১ সিসি ১ লিটার পানিতে মিক্স করে মাসে ১-২ দিন দিবেন। (২ দিন আলাদা ভাবে।)

বিঃদ্রঃ আবেগের বশে বেশি দিবার চেষ্টা করবেন না বা বেশীদিন দিবেন না তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।


৩) রসুন বাঁটা ১ চামচ(চা) + মধু ১ চামচ+লেবুর রস ১ চামচ= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে ছেকে সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরবেশন করবেন ১ দিন মাসে।

বিঃদ্রঃ ৩ নং টি করার সময় অনেক কবুতর বমি করতে পারে যা ভয়ের কারন নাই, তবে যদি ক্রিমির কোর্স করা না থাকে, বা সাল্মনেল্লা কোর্স করা না থাকে তাহলে এই কোর্স করাবেন না অনুগ্রহ করে।


(উপরের ৩ টি সাল্মনেল্লার জন্য বিশেষ উপকারি তাই ছকে ৩টাই আলাদা দুরত্তে রাখবেন।)


৪) হোমিও deptherinum 200 , ১ সিসি= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (মাসে ১-২ বার আলাদা ভাবে।)


৫) হোমিও Tiberculinum 30, ১ সিসি= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (মাসে ১ বার)।


৬) হোমিও Belodona 30, ১ সিসি= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (মাসে ১ বার)।


৭) হোমিও Borax 30, ১ সিসি= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (মাসে ১ বার)।


৮) হোমিও Eupatorium Perfo. ১ সিসি= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (মাসে ১ বার)।


(সতর্কতাঃ ২ ধরনের হোমিও ঔষধ একসঙ্গে ব্যাবহার করবেন না একটানা প্রয়োগ করবেন না অনুগ্রহ করে।)


দ্বিতীয় পর্যায়ঃ (প্রতিকার)


৯) মাল্টি ভিটামিন (pawer max(made in Vietnam), All Vit Ma(Made in Germany), Max grower (made in Holland) ১ সিসি/গ্রাম= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে ৩-৪ দিন সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (একটানা)।


১০) ক্যালসিয়াম ও ই ভিটামিনের জন্য ( Calcium Forte+AD3e ) এইধরনের ভাল মানের ভিটামিন প্রয়োগ করতে পারেন, ১ সিসি/গ্রাম= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে ৩-৪ দিন সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (একটানা)।


১১) লিভার টনিক হিসাবে হামদারদ এর (Cinkara, Icturn, Karmina) করতে পারেন ২ টেবিল চামচ = ১ লিটার পানিতে মিক্স করে ২-৩ দিন সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (একটানা)।


১২) ভিটামিন বি হিসাবে (toxynil, biovit, vita B+C) ১ সিসি/গ্রাম= ১ লিটার পানিতে মিক্স করে ২-৩ দিন সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন (একটানা)।


১৩) এছাড়াও আলভিরা, স্যালাইন( ভেট এর), লেবুর রস বা ভিটামিন সি প্রয়োজন মত ব্যাবহার বা প্রয়োগ করতে পারেন। (গরমের সময় পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কবুতর পানি শূন্যতাই না ভুগে।)


তৃতীয় পর্যায়ঃ( প্রতিষেধক)


১৪) কবুতরের ক্রিমির ঔষধ শীতে ৪৫ দিন পর পর ও গ্রীষ্মে ২ মাস পর পর অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে। (wormazole/avinex/panacure) আদর্শ ক্রিমির ঔষধ হিসাবে দিতে পারেন। (খেয়াল রাখবেন ক্রিমির ঔষধ প্রয়োগ রাতে করুন, আর পরিমান টা নির্দিষ্ট করুন। সাধারন খাবার পানি হিসাবে পরিবেশন করবেন না, আর মানুষের কোন ক্রিমির ঔষধ কখনও দিবেন না। আর প্রয়গের আগে ও পরে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলুন।)


১৫) যারা PMV এর জন্য ভাক্সিন বা পক্স বা অন্য রোগের ভাক্সিন দিতে চান তারা একটু নিয়ম মেনে তারপরই দিবেন (আর এটা অবশ্যই বাইরের টা যদিও পক্স ও অন্য রোগের ভাক্সিন এ তেমন ভুমিকা রাখে না) , আর যারা মনে করেন যে মুরগির ভাক্সিন দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন, তারা এই পোস্ট টা এড়িয়ে চলুন। কারন তাদের জন্য এই পোস্ট না।


১৬) আপনার কবুতর কে অবশ্যই ৩ মাস পর পর উকুন নাশক শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করাতে হবে, যাতে মাইট ও কবুতরের গায়ের মাছি থেকে নিরাপদ থাকা যায়। যা বিভিন্ন রোগের কারন হিসাবে দায়ী। সাধারন অবস্থাই প্রতি সপ্তাহে গোসল এর ব্যাবস্থা করা ভাল, আর রোগ থেকে আরোগ্য লাভের পর অবশ্যই গোসল দিয়াবেন।


১৭) প্রবায়টিক মাসে ২ বার অবশ্যই দিবেন, সেটা প্রাকৃতিক হোক বা প্রস্তুত করাই হোক। আর অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহারের পর এটা দিতে কোনদিন যেন ভুলে না যান, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।


এই ছকটি দিন আকারে বা তারিখ হিসাবে দেয়া হয়নি কারন, অনেকেই মনে করেন যে, তারিখ আকারে নিয়ম টা এদিক ওদিক হয়ে গেলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে, যা আসলেই ঠিক না, এমনকি কবুতরের অসুস্থ অবস্থাতেও এর ব্যাতিক্রম করতে চান না। তাই এমন ভাবে উপস্থাপন করা হল যাতে আপনার পছন্দ মত আপনি সাজিয়ে নিতে পারেন। অবশ্যই এগুলো প্রয়োগ করতে গিয়ে পরিবেশ পরিতস্থিতির ও আবহাওয়ার দিকে খেয়াল রাখবেন। যাতে আপনি নিজে একজন পরনির্ভরশীল খামারিতে পরিনত না হন। বা এটা করতে গিয়ে আপনাকে আরেকজনের উপর নির্ভর করতে না হয়। পরিশেষে কোরআন এর একটি আয়াত দিয়ে শেষ করতে চায়,


“আর যে সম্পদকে আল্লাহ তোমাদের জীবন-যাত্রার অবলম্বন করেছেন, তা অর্বাচীনদের হাতে তুলে দিও না। বরং তা থেকে তাদেরকে খাওয়াও, পরাও এবং তাদেরকে সান্তনার বানী শোনাও।” (সূরা আন নিসাঃআয়াত- ৫)


মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই



কবুতরের গ্রীষ্ম কালীন মাসিক ছক BD Online Pigeon Market

কবুতরের গ্রীষ্ম কালীন মাসিক ছক

Pigeon Discussion

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন