একভাই একদিন ফোন দিলেন যে তাঁর একজোড়া কবুতর কেনার পর থেকে ডিম দিচ্ছে না। কি করা যায়? আমাদের দেশে অধিকাংশ খামারি আছেন যারা প্রতিনিয়ত আশা করেন কবুতর ডিম বাচ্চা করবে আর করতেই থাকবে। আর সেটা যে কোন মুল্যেয় হোক না কেন! যদি কোন কবুতর ১৫ দিন বা ১ মাস ডিম দিতে দেরি করে তাহলে চিন্তার অন্ত থাকে না। কিন্তু কেউ এততুকু বুঝতে চাই না যে, এই প্রাণীটিরও বিশ্রাম এর প্রয়োজন আছে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে “ তুই ডুবে মর আমাকে শালুক তুলে দে ” কথায় বলে যে একটা কবুতর ১২ মাসে ১৩ বার ডিম দেয় স্বাভাবিক পরিবেশ ও সুষম খাবার পায় সেই অবস্থায়। কিন্তু খুব কম খামারিই আছেন যে তাদের এই অবস্থা নিশ্চিত করতে পেরেছেন। আপনি যেমন ফসল বুনবেন আর ফলও তেমনি পাবেন। আপনি শুধু গম ভুট্টা খেতে দিয়ে আপনি কখনও ভাল ডিম বাচ্চা আশা করতে পারেননা। কিছু খামারি আছেন যারা কিছু দামি জাতের কবুতর কে দিয়ে নিয়মিত ডিম নেন। আর ফসটার দিয়ে বাচ্চা পালেন। এই ভাবে মাসে ২-৩ বার ডিম নেনে।আর কিছু খামারি আছেন যারা ২ মাদী ও ১ নর দিয়ে ব্রীড করেন ও ডিম নেনে। আর এটা তারা গর্ব ভরে প্রচার করেও বেড়ান। এখন কেউ যদি এই ধরনের ব্রীডার কে কসাই বলে আখ্যায়িত করেন তাহলে কি ভুল বলা হবে?
এই ত সেদিন এক খামারি জানালেন যে তিনি তা একজোড়া কবুতর থেকে ২ লক্ষ টাকা আয় করেছেন কিন্তু মাদিটা ২-৩ মাস ধরে অনিয়মিত ডিম দিচ্ছিল বলে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কি ধরনের কথা। এত টাকা আয় করার পরও তাকে বিশ্রাম দিবার প্রয়োজন মনে করেননি এই খামারি। খুবই দুঃখ জনক একটা ব্যাপার। প্রায় খামারি আছেন যারা ব্রিডিং জোড়া কিনতে পছন্দ করেন, যাতে বাসায় নিয়ে যাবার কিছু দিনের মধ্যে ডিম পারে বাচ্চা উঠায়। আর তিনি যদি সেই জোড়া বাসায় নিবার পর ১ মাস ডিম না দেন তাহলে অস্থির হয়ে পরেন। আর বিক্রেতার চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলেন। কিন্তু কেন এরকম হচ্ছে কেও একবার ভাবার চেষ্টা করেন না।
আমরা অনেকে সখ থেকে কবুতর পালা শুরু করি কিন্তু পরে টা নেশা ও এরপর পেশা হিসাবে নেন বা নিতে পারেন কন দোষের কিছু নাই। কিন্তু দোষ হল যে সেই প্রাণীটির দিকে খেয়াল না রাখা। সধারনত নর এর থেকে মাদি কবুতরের জীবন কাল তুলনামূলক ভাবে একটু কম হয়। এর অনেক কারন গুলোর মধ্যে একটা কারন হল ঘন ঘন ডিম পারা ও বাচ্চা তুলা। একটা কবুতরের জন্য ডিম পাড়া ও বাচ্চা তুলাটা এবং সেই বাচ্চা তিলতিল বড় করা যে কি কষ্টের তা যদি কেউ সঠিক ভাবে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারত তাহলে হত তিনি বা তারা ডিম বাচ্চা করা বন্ধ করে দিত। একজন সাধারন মানুষ যদি দিনে ২-৩ বার বমি করে তাহলে তাঁর শারীরিক অবস্থা কি হতে পারে? কিন্তু একটা কবুতর দিনের পর দিন অনবরত বাচ্চা কে এই ভাবে খাওয়াচ্ছে। আমি বলব না যে ডিম বাচ্চা করা বন্ধ করে দিতে কিন্তু এর মাঝে একটু রেস্ট দিতে হবে। যেমন আপনি ২-৩ বার বাচ্চা করেছেন এর পর ১৫ দিন রেস্ট দেন। কিভাবে দিবেন। যেমন নর মাদি কে আলাদা রাখা বা প্লাস্টিক ডিম দিয়ে বসিয়ে রাখা। আর এর মাঝে তাকে সুষম খাদ্য, ভিটামিন ও মিনারেলস সরবরাহ করা। গরমের সময় ডিম বাচ্চা করা সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কারন একটা কবুতরের জন্য শীতের সময়তা একটু চালেজিং । কারন এই সময় টা তে রোগ বালায় বেশি হয়। এ ছাড়াও অন্যান্য অবস্থা চিন্তা করলে বুঝা যায়। যদিও বাংলাদেশের বাইরে থেকে এই দেশের জলবায়ু ও আবহাওয়া কবুতর পালা জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। ইউরোপ সহ বাইরের বিভিন্ন দেশে শীতে একেবারেই ব্রিডিং বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাঁর মানে আমি এটা বলছি না যে শীতে একবারেয় ব্রিডিং বন্ধ করে দিতে।এতা বলছি যে যে কন মৌসুমেই ব্রিডিং করেন না কেন একটু দেখে শুনে বুঝে ব্রিডিং করাবেন। এখন আসুন আমরা ডিম ও এর গঠন নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করি।
ডিমঃ
ডিম্ব বা ডিম্বাণু থেকেই প্রাণী জিবনের সৃষ্টি হয়। সাধারণত স্তন্নপায়ী প্রাণীর ভ্রুনের বৃদ্ধি ঘটে জননীর দেহের ভিতর, কিন্তু পাখি বা কবুতর জাতীয় প্রাণীর ভ্রুনের বৃদ্ধি ঘটে দেহের বাইরে তা দেবার মাধ্যমে। আমার কয়েকটি পোস্ট এ ডিম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর মধ্যে কবুতর কেন ডিম ভাঙ্গে ও খায়, ডিমের নরম খোলস, ও ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যাওয়া ইত্যাদি। আপনি আপানার কবুতর কে যে ধরনের খাবার দিবেন সে ঠিক সেয় ধরনেরি ডিম দিবে। মানে আপনি যদি ভাল বাচ্চা পেতে চান তাহলে অবশ্যই সুষম খাদ্য ও ভাল খাদ্য সার দিতে হবে। আর ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যাওয়া বা বাচ্চা দুরবল হাওয়াই এর অন্যতম কারন হিসাবে ধরা হয়। প্রতিটি ডিম্বাণু ঝিল্লি প্রাথমিক অবস্থায় একটি বোটার সাহায্যে ডিম্বাশয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এরপর পুষ্ট ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে বিছিন্ন হয়ে ফ্লানেল এর মধ্যে আসে এবং পরিশেষে বাইরে বেরিয়ে আসে। ডিম পারার ৩০ মিনিট পর্যন্ত ডিমের খলের চারপাশে মোম জাতীয় একটি আবরন পরে। যাকে Cuticle বলে। এটি ডিম নালির ভিতর সঞ্চালনে সাহায্য করে থাকে। ডিম শেল এর সামগ্রিক মান প্রভাবিত করে এমন অনেক কারন আছে। ডিম শেল 97 94 % ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ওপর গঠিত। অন্য তিন শতাংশ জৈবপদার্থ ও ডিম শেল রঙ্গক হয়। শেলে 8,000 হিসেবে আণুবীক্ষণিক ছিদ্র আছে। শেল নিজেই বাইরের আবরণ আচ্ছাদন মত প্রোটিন এর ঠিক পূর্বে শেল জমা হয় যা ত্বকের বাইরের স্তর বা পুষ্প শেল মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া অনুপ্রবেশ থেকে ডিম অভ্যন্তর বিষয়বস্তু রক্ষা নামক শ্লৈষ্মিক আবরণ রয়েছে। ডিম শেল এর গুণ শেল এর রং, আকৃতি, এবং গঠন দ্বারা নির্ধারিত হয়। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলিত হয়ে ডিমের ভিতর একটি প্রান মণ্ডল তৈরি হয় আর এটা সব সময় কুসুমের উপরের অংশে থাকে। ডিমের কুসুম বাচ্চার দেহের অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। আর এটি ভ্রুনের জন্য প্রতিনের সরবরাহ নিশ্চিত করে। ডিম ধরার সময় আলত করে ধরতে হয় যাতে ঝাকি না লাগে।বা ডিম ৪ দিনের মাথায় যে রক্ত জমে তা জোরে নাড়াচাড়া করলে তা রগ ফেটে ডিম অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। ডিমে যদি কন কারনে ফাটল ধরে আর যদি কন রস বের না হয় তাহলে ডিম জমার ব্যাপারে কন অসুবিধা হয় না তবে ডিম টি পুদিং দিয়ে ভাল করে লেপে শুকিয়ে নিতে হবে। টেপ দিয়া ঠিক না…এতে পরে বাচ্চা বের হতে অসুবিধা হতে পারে। কিছু কবুতর আছে একটা ডিম দিবার পরপরই ডিমে বসে। আর কিছু আছে যে ২ টা ডিম দিবার পরি কেবল ডিমে তা দেয়। কিছু আবার আছে ডিমে একেবারেই বসে না বা কিছুদিন পর ডিম থেকে উঠে যায়। আই ধরনের কবুতরের জন্য ফসটার রাখতে হয়। সাধারণত বড় ধরনের কবুতরের ১ জোড়ার জন্য ৩ জোড়া করে ফসটার রাখা ভাল।
পরিশেষে বলতে চাই যদি আপনি ঠিকমত বাচ্চা আশা করেন তাহলে অবশ্যই রেস্ট এর পাশাপাশি ডিম বাতি পরিস্কার, ডিম পরিস্কার ও ডিমের আদ্রতা নিশ্চিত করতে হবে। আর তায় ৮ দিনের পর থেকে ডিমে ২-৩ দিন অন্তর পানি স্প্রে করা ও কবুতরের গোসল নিশ্চিত করতে হবে। এতে ডিমের হ্যাচিং এর সম্ভাবনা বেরে যায়। আর আপনি যদি সোনার ডিম পাড়া হাঁসের গল্পের মত সুধুই ডিম চান তাহলে কোন কথা নাই। আপনি হয়ত বেস কয়বার ডিম বাচ্চা করতে পারবেন, কিন্তু আদুর ভবিষ্যৎ এ একটি সুন্দর সম্ভাবনা কে নষ্ট করার জন্য আপনিই দায়ি থাকবেন।
মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই
সুধুই ডিম চাই by KF Sohel Rabbi BD Online Pigeon Market

Pigeon Discussion
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন