স্কুল জীবনে ব্যাপারে মধ্যমানের ছাত্র ছিলাম অলসতার কারনে। সেই পড়া গুলই শুধু পরতাম যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হত বা পরীক্ষায় কমন পড়ার সম্ভাবনা থাকত। আর শিক্ষা জীবন মোটামুটি এভাবেই পার করেছি। কিন্তু কর্ম ও ব্যাক্তি জীবনে এসে যেগুলো বাদ দিয়েছি সেগুলকেই আবার নতুন করে শিখতে হয়েছে। এর মানে হল জীবনে কোন কিছুকেই ফাকি দিবার কোন সুযোগ নেই। অর্থাৎ আমরা শিক্ষা থেকে পালিয়ে যেতে পারব কিন্তু জীবন থেকে না। জীবন আমাদের সব কিছুই শিখতে বাধ্য করবে। কেও হয়তো সহজে আর কেউ হয়তো অনেক মূল্য দিবার পর। আমাদের জীবনে যত সময় যাচ্ছে, আমরা সামনের দিকে এগোনোর বদলে উল্টো পথে হাঁটছি। আমরা যে শুধু উল্টো পথেই হাঁটছি তাই নয় আমাদের কমন সেন্স ও দিন দিন ভোতা হয়ে যাচ্ছে। আর তাই হয়তো কন্তি সঠিক আর কোনটি নয় সেটি বিবেচনার শক্তিও নাই।
যেমন আমাদের কবুতর খাতকেই ধরুন না কেন…এখানে সবাই নিজেকে বড় মনে করে আর করতে চাই। আর কে কার চেয়ে বড় তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা । আর এটা করতে গিয়ে মানুষ নানা রকম ভুল তথ্য দিচ্ছে প্রতিনিয়ত আর এটা করতে তারা পিছপা হয়না, আর একটু লজ্জাবোধ ও জাগে না মনে। অথবা এটা নিয়ে তারা চিন্তাও করেন না যে তার একটা মন্তব্য বা কথা বা উপদেশ অন্যের জীবন হানীর কারন হতে পারে। কবুতরের ভালবাসার কারনে প্রতিদিন অনেক কল গ্রহন করতে হয়। আর অধিকাংশ আসে নানা কবুতরের সমস্যা নিয়ে, যাদের অনেকে সব ধরনের ঔষধ ব্যাবহারের পর যখন কবুতরের অবস্থা চরম হয়ে যায়। আর যিনি এর মূল্য দিচ্ছেন তিনিও এই ব্যাপারটাকে খুবই স্বাভাবিক ভাবেই নেন। যেন তিনি ব্যাপারটা জানেন যে এরকম হবে। এটা কি স্বাভাবিক? এরা কি আসলেই কবুতর প্রেমী? না কখনই না। যারা কবুতরকে গিনিপিগের মত কবুতরের উপর ঔষধ প্রয়োগ করেন, তারা অন্য কে উপদেশ দেন ঠিকই কিন্তু নিজেরা কিন্তু আবার সতর্ক এব্যাপারে। কারন সেসব লোক তখনি নিজেরা এই ঔষধ নিজেরা প্রয়োগ করেন যখন দেখেন আর ফলাফল ভাল। এরা যদিও নিজেদের কবুতর প্রেমী হিসাবে দাবি করে। কিন্তু তারা যদি নদীর পারে গলায় দরি বেধেও মাইক লাগিয়ে চিৎকার করতে থাকে তাহলেও সে নিজেকে কবুতর প্রেমী বানাতে পারবে না। এরা আসলে এক জন হিংসুক,অহংকারি একধরনের লোক যারা সুনামের জন্য ছুটে বেড়ায়। কিন্তু তারা ভুলে যায় যে,আল্লাহ যাকে সম্মানিত করতে চান তাকে কেউ বদনাম করতে পারে না আর যাকে অসম্মানিত করতে চান, তাকে কেউ সাহায্য করতে পারবে না। অনেক মানুষ আছেন যারা নতুনের দোহায় দিয়ে পার পেতে চান।
সেদিন একজন কে বললাম ১ সিসি ঔষধ প্রয়োগ করার জন্য তিনি পুরো ১ শিশি ঔষধ দিয়ে দিলেন, অজুহাত হিসাবে বললেন আমি ত নতুন তাই বুঝি নাই। নতুন বা পুরাতন যেই হন না কেন, যদি আপনার সাধ্রন জ্ঞান না থাকে তাহলে, আপনাকে অনুরধ করবো আপনি কবুতর পালা ছেড়ে দিন বা পালার কথা মাথায় আনবেন না। আমরা যদি একটু নিজেদের দিয়ে চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাব যে, আমাদের যখন ঠাণ্ডা লাগে তখন আমরা কি অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করি? কিন্তু কবুতরের ক্ষেত্রে অবলিলায় ব্যাবহার করি। আমাদের যখন ডায়রিয়া হয় তখন কি অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করি? কিন্তু কবুতরের ক্ষেত্রে অবলিলায় ব্যাবহার করি! বহিঃ বিশ্ব ঔষধের উপর থেকে নির্ভরতা কমানর চেষ্টা করছে। যখন ঔষধ থেকে দূরে থাকার জন্য নানা ধরনের আকুপাংচার,আকুপ্রেসার রেফ্লেক্সসলজির মত থেরাপি ব্যাবহার করছে। যখন হারবাল ও হোমিও ঔষধের প্রতি বেশী ঝুকছে। তখন আমরা ৩য় ও ৪র্থ জেনারেশন এর মত উচ্চমানের অ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহারের এক মহা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কেন? শুধুই ব্যাক্তিগত প্রচার ও প্রসারের জন্য। অল্পতে বেশী সুনাম ও যশ কামানর জন্য। আমাদের মনে সেই বাংলা সিনেমার মত দেখা যায় যে নায়ক রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বড়লোক হয়ে গেল। এই রকম অল্পতে কিছু হয়ে যাওয়া,আর সেটা যেকোনো মুল্যেই হোক না কেন। নকল করেই হোক আর যেভাবেই হোক। এরা সেই ব্যাক্তি যারা চাই না যে কবুতর খাত টি স্বয়ং সম্পন্ন হোক, দিনে দিনে বেড়ে উঠুক। তারা হিংসা করে, যেন তারা ছাড়া আর কেউ এই খাতে বড় না হতে পারে। আর তারই জন্য তাদের চেষ্টারও কমতি নাই, এই সেক্টর কে ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গেছে যে, সবই আল্লাহ্র সৃষ্টি আর আল্লাহ ছাড়া কার বিন্দু মাত্র ক্ষমতা নেয় কোন প্রাণীর বিন্দু মাত্র ক্ষতি করার। কখনই তারা সফল হয় না বরং তারা আল্লাহ ও তার ফেরেশতাদের লানতের/অভিশাপের দাবানলে নিঃশেষ হয়ে যাবে একদিন। যাই হোক আসুন আমার কিছু ভুল সম্পর্কে জেনে নেই যা অধিকাংশ মানুষ করে থাকেঃ
১) Cosomix Plus,ESB30 এই ঔষধ সাল্মনিলা ভাল করে ঠাণ্ডা দূর করে ইত্যাদি ইত্তাদি, যা আসলেই সঠিক না। এরপরও মানুষ একই ভুল করে যাচ্ছেন নিয়মিত ভাবে।
২) ক্রিমির ঔষধ যেকোনো একটা প্রয়োগ করলেই হয়, যা আসলেই ঠিক না, ভাক্সিন ও ক্রিমির ঔষধ প্রয়োগের ফলে কবুতরের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে, বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গে আর তাই ভিটামিন ও মিনারেলস দিয়ে আস্তে আস্তে ঠিক করতে হয়। আর তাই এই দুটি যিনি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় সবচেয়ে বেশী। মানুষের ক্রিমির ঔষধ ব্যাবহারের আসন্ন ক্ষতি সম্পর্কে না জেনেই অনেকে এই ধরনের ঔষধ ব্যাবহারের পরামর্শ দেন আর কিছু লোক এগুলো না জেনেই ব্যাবহার করছেন অবলিলায়। আর তার মূল্য কম দিচ্ছেন না। কিছু নিদিষ্ট ঔষধ ছাড়া ও নিয়ম অনুসরন ছাড়া ক্রিমির ঔষধ ব্যাবহার করা থেকে সতর্ক থাকতে বিশেষ ভাবে অনুরধ করছি।
৩) কবুতরের চোখের জন্য নানা জন নানা ধরনের ড্রপ ব্যাবহারের পরামর্শ দেন, কিন্তু এর সতর্কতা সম্পর্কে বেশিরভাগ লোকই জানেন না। চোখের ড্রপ ব্যাবহারের সময় সিমা ৩-৫ দিন এর মধ্যে যদি ভাল না হয় তাহলে এক্সপার্ট এর পরামর্শ নিতে হবে, তা না হলে আপনার কবুতর সারা জীবনের মত অন্ধও হয়ে যেতে পারে।
৪) যে কোনো অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগের আগে খেয়াল করুন যে, আপনার কবুতর খাওয়া বন্ধ করেছে কিনা, কেবল এর পরই অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগ করুন। এর প্রয়োগের পর ২-৩ দিন খেয়াল করুন এর পায়খানার রঙ পরিবর্তন হয়েছে কিনা দেখুন। যদি পরিবর্তন না হয় তবে তখনি কেবল অন্য ওষুধ প্রয়োগ করুন। আর অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগের সময় সাথে আগে বা পরে অবশ্যই স্যালাইন দিন। আর অ্যান্টিবায়টিক এর সাথে কোন ভিটামিন মিক্স করবেন না।
৫) প্রায়ই দেখা যায় যে কাঙ্কার বা পক্স হলে অনেকে এর চামড়া উঠিয়ে ফেলতে বলেন,কিন্তু এতে সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
৬) অনেকেই আছেন যারা পাতলা পায়খানা দেখলেই অস্থির হয়ে যান, কিন্তু কিছু পায়খানা আছে যেগুলো সাধারন, ফলে আগে পায়খানার ধরনটা নির্ণয় করতে হবে।
৭) বেশিরভাগ খামারিই ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ এর পার্থক্য করতে পারেন না, আর না জেনেই অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগ করেন। কিন্তু ভাইরাল সংক্রমণ এ কোন অ্যান্টিবায়টিক কাজ করে না। যেমনঃ থান্দা,পক্স, ডায়রিয়া ইত্যাদি।
৮) সবুজ পায়খানা হলেই অনেকে মনে করেন রানিখেত, সাল্মনিলাইত্তাদি রোগ হয়েছে। যা আসলে ঠিক না, সবুজ পায়খানা খাবারের কারনেও হয়।
৯) অধিকাংশ খামারি সাদা পায়খানা নির্ণয়ে বিশেষ অসুবিধায় পরে থাকেন, সাদা পায়খানার সাথে অন্য অংশ থাকলেও তারা সাদা অংশটায় খেয়াল করেন। কিন্তু রোগ নির্ণয়ে পর্যবেক্ষণ টা অনেক বেশী জরুরি।
১০) শীতে ডিম বাচ্চা করতে হয়না বা শীতে কবুতর কম ডিম পারে বা শীতের সময় কবুতরের ডিম বাচ্চা করতে অসুবিধা হয়। এই ধরনের নানা কাহিনী শুনা যায়। আসলেই কথাটা কি ঠিক ? মোটেই না বরং একটু খোজ নিয়ে দেখুন ঘটনাটা ঠিক উল্টো। আপনি যেকোনো সময় ডিম বাচ্চা করেন না কেন, আপনাকে সুষম খাদ্য ও ভিতামিন/মিনারেলস আর বিস্রাম দিবার ব্যাপারটা একটু খেয়াল রাখবেন। আর ২৪ ঘণ্টা খাবার ও পানি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে যেকোনো ঋতুতেই ডিম বাচ্চা করতে আপনার কোন অসুবিধা হবে না।
আপনি যাই করুন কিছু ব্যাপারটা আপনাকে ভাল করে খেয়াল রাখতে হবে। যেমনঃ
ক) সঠিককভাবে রোগ পর্যবেক্ষণ ও নির্ণয়।
খ) রোগ অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন ।
গ) রোগের অনতি বিলম্বে চিকিৎসা শুরু,ঔষধের সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ ও পরিশেষে ধৈর্য ধারন করা।
এগুলি নিরাময়ের অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে ধরা হয়। আর আপনি যদি এটি করতে অক্ষম হন তাহলে আপনার সমস্থ পরিশ্রম বিফলে যাবে। সর্বোপরি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের উদ্দেশ্য শুধু রোগ নির্ণয় না, রোগ নির্ণয়ের পরে এর সঠিক চিকিৎসাও এর পর সঠিকনিয়মে ডিম বাচ্চা করা। আর এই ব্যাপারটা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। একজন কবুতর প্রেমী এমন কোন কাজ করতে পারে না যাতে কবুতরের কোন ক্ষতি হয়। আপনি কত বছর কবুতর পালেন এটা আপনার ভালবাসার মাপকাঠি না বা সেটা আপনার অভিজ্ঞতার বা আপনি যে একজন এক্সপার্ট সেটাও নির্দেশ করে না। আপনি আপনার কবুতরের একমাত্র অবিভাবক আর আপনার থেকে আপনার কবুতরের ভাল মন্দ আর কেউ বুঝবে না। আর তাই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি যার কাছে থেকে উপদেশ গ্রহন করছেন সে আদৌ কবুতর সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আছে কিনা বা তিনি এই জ্ঞান ধারন করেন কিনা তা বিবেচনার দায়িত্ব আপনার। আপনি যদি এই ব্যাপারে ভুল করেন তাহলে আর পরের দায়িত্ব টা আপনার উপর বর্তায়। আর আপনি তখন এই ব্যাপারে অন্য কাউকেই দোষারোপ করতে পারবেন না। পরিশেষে বলতে চাই যে সবায় যদি ভুল পথে যাই, তাহলে সেটাই যে সঠিক তা নয়। এটা আপনার সাধারন জ্ঞান ও দৃষ্টি ভঙ্গি যা আপনাকে সঠিক পথ নির্দেশনা দিবে।
মূল লেখক : সোহেল রাবি ভাই
ভুল সবই ভুল (কবুতর কেস স্টাডি ২য় পর্ব) BD Online Pigeon Market

Pigeon Discussion, Pigeon Diseases & treatment
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন